পৃষ্ঠাসমূহ

সোমবার, ১৩ আগস্ট, ২০১২

আমরা কি একটা সুযোগও পেতে পারি না?

অভি (ছদ্মনাম) এবার উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়ে মেডিকেল ভর্তি কোচিং করছে। স্বপ্ন একটি সরকারী মেডিকেলে চান্স পাবে। কোচিং এর শুরুর দিন থেকে দিন রাত পড়াশোনা। রুম থেকে যেন বেরই হয় না। কোচিং, খাওয়া আর পড়া। ওর বাবা দিন মজুর। তবুও অনেক কষ্টে টাকা জোগাড় করে ছেলেকে কোচিং করতে পাঠিয়েছে। অভিকে একদিন জিজ্ঞেস করলাম, তোমার পড়াশোনার কি খবর? বলল, ভাইয়া, আমার তো এসএসসি এবং এইচএসসি এর জিপিএ আট দশমিক পাঁচ। তাই খুব ভালো করে পড়ছি। যেন ভর্তি পরীক্ষায় ভালো করতে পারি। বললাম, তুমি কি ভর্তি পরীক্ষায় এই গ্যাপ কভার করতে পারবে? বলল, এর আগে এমন অনেক নজির আছে যারা শুধু মাত্র ন্যুনতম আবেদন করার যোগ্যতা ছিল মাত্র, তারপরেও এই কয়টা দিনের পড়াশোনায় মেডিকেলে চান্স পেয়ে গেছে। আমি পাব না কেন? ওর আত্মবিশ্বাস দেখে আমিও আশায় বুক বাধলাম। ঠিকই তো ভর্তি পরীক্ষায় ভালো করলে তো চান্স পাওয়া আসলেই সম্ভব।

মীম (ছদ্মনাম) গত বছর মেডিকেল কোচিং করেও চান্স পায় নি। তারপরও অবশ্য অন্য কোন জায়গায় ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেয় নি। কারণ, ওর জীবনের একটা মাত্র লক্ষ্য, ও ডাক্তার হবে। লক্ষে স্থির থাকতে ও এবার আবার কোচিং করছে। অবশ্য ওর এসএসসি এবং এইচএসসি পরীক্ষার জিপিএ ভালো ছিল না। কিন্তু আত্মবিশ্বাস এটাই ও দুটি বছর অনেক পড়েছে। অনেক ভালো প্রস্তুতি ওর। বই এর কোথায় কি আছে ও বলে দিতে পারে। এখন শুধু ওই দিনটার জন্য অপেক্ষা যেদিন পরীক্ষার প্রশ্ন পেয়েই বলতে পারে, আমি পেরেছি। আমার সুযোগ আমি কাজে লাগাতে পেরেছি।

উপরের দুইটা ঘটনাই বর্তমান সময়ের খুব স্বাভাবিক ব্যাপার। ভর্তি কোচিং করতে আসা হাজার শিক্ষার্থীদের স্বপ্ন তাদের কষ্টটা যেন বৃথা না যায়। হয়ত ভাগ্য দোষে অথবা নিজেদের উদাসীনতায় যারা এসএসসি অথবা এইচএসসি পরক্ষায় ভালো করতে পারে নি, তাদের অনেকেরই ভর্তি পরিক্ষার আগে হুশ ফেরে। কঠোর পরিশ্রমে অনেকেই ছিনিয়ে আনে সাফল্যের মুকুটটি। মেডিকেল ভর্তি পরিক্ষার বিগত বছর গুলোর ফলাফল বিশ্লেষণ করলে খুব ভালো করেই দেখা যায় যে যারা চান্স পেয়েছে তাদের যে সবারই এসএসসি এবং এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ পাঁচ ছিল তা নয়। অধিকাংশই চান্স পায় যাদের জিপিএ কম ছিল অথচ ভালো করে পরবর্তিতে পড়াশোনা করেছে। শুধু মাত্র জিপিএ ভালো বলে অনেক ছেলে মেয়ে আছে এই গর্বেই পড়াশোনা করে না। তাই ভালো কোথাও চান্সও পায় না। ভর্তি পরীক্ষায় এই কথাটা খুব বেশি প্রচলিত যারা এইচএসসি এর পরের কয়টা মাস মন দিয়ে পড়বে, সময়টা কাজে লাগাবে তারা চান্স পাবে। হয় ও তাই। অনেক তথা কথিত ভালো ছাত্র বা ছাত্রি আছে যারা সময়তা কাজে না লাগানর কারনে ঝরে যায় অথবা আশানুরুপ জায়গায় চান্স পায় না। এরকম হাজার নজির আছে।

আমি বুঝলাম না। কি বুঝে কর্তৃপক্ষ এই আত্মঘাতি সিদ্ধান্ত নিলেন? উপরে উল্লেখিত এই কমল মতি দুই জনছাত্র ছাত্রীর মত হাজার শিক্ষার্থী কি অপরাধ করেছিল? এত কষ্ট করে স্বপ্ন বাঁচাতে রাতের পর রাত ঘুম বাদ দিয়ে যারা আগের ভুল সংশোধন করে নতুন করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে সচেষ্ট, তাদের দশটা কোথায়? নাকি সরকার মনে করছে যে ভুল তো ভুলই। এটা সংশধন করা যায়?

ভর্তি পরীক্ষায় দুর্নীতি হয়। এটা ঠেকাতে তাই ভর্তি পরীক্ষাই নাকি নেওয়া যাবে না। মাথা ব্যাথার ওষুধ যে মাথাটাই কেটে ফেলা-এটা আসলে আমার জানা ছিল না।
প্রতি বছর এত শিক্ষার্থী জিপিএ পাঁচ পায় যে এখান থেকে কিভাবে যোগ্যরা চান্স পাবে? সবাই চান্স পাবেও না। তাহলে যোগ্যতার মাপকাঠিটা কি? ওদের থেকেই যদি সবাই চান্স না পায়, তার মানে কি বাকীরা অযোগ্য? আর যারা জিপিএ পাঁচ পায় নি, তারা তো হাত টা জোড় করে বলতেই পারে যোগ্যতা প্রমানের একটা সুযোগ আমরাও কি পেতে পারি না?

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

মনে রাখবেন: এই ব্লগের কোনও সদস্যই কোনও মন্তব্য পোস্ট করতে পারে৷