পৃষ্ঠাসমূহ

বুধবার, ৬ মার্চ, ২০১৩

লাইফের কিছু অদ্ভুত ঘটনাঃ

আমাদের লাইফের কিছু অদ্ভুত ঘটনাঃ ১. আমরা প্রত্যেকেই অনেক অনেক টাকা কামাই করতে চাই, কিন্তু আমাদের লাইফের সবচেয়ে সেরা সময়টা আমরা পার করি যখন পকেটে ১০ টি টাকাও অনেক মহামূল্যবান (স্কুল লাইফ)।। ২. আমরা অনেকেই চাই দামি দামি ব্র্যান্ডের পোশাক পড়তে, কিন্তু সবচেয়ে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি যখন বাসায় পায়জামা অথবা লুঙ্গী পড়া অবস্থায় থাকি।। … ৩. আমরা প্রত্যেকেই চাই দামি দামি হোটেলে গিয়ে খাবার খেতে, কিন্তু সবচেয়ে বেশি উপভোগ করি যখন ফ্রেন্ডরা মিলে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে ভ্যান গাড়ি থেকে ফুচকা কিনে খাই।। ৪. আমরা সবাই দামি দামি গাড়ি কিনতে চাই, বিলাসবহুল যাতায়াত বেবস্থা চাই, কিন্তু সবচেয়ে বেশি ভালো লাগে যখন নির্জন কোনো রাস্তায় বন্ধুরা মিলে হাঁটতে হাঁটতে গল্প করি।। ৫. আমরা সবাই চাই দামি মোবাইল কিনতে, আই পড, আই টাচ কিনতে, কিন্তু ভেবে দেখুন, মাঝে মাঝে ভাঙ্গা রেডিওতে বাজা গানটি আপনার মনে কিরূপ শান্তি এনে দেয়।। ** জীবনটা আসলেই অনেক মজার, কিন্তু আমরা জটিল সব জিনিসের পেছনে দৌড়িয়ে এর সমীকরণকে আরো জটিল করে ফেলি।। নিজের জীবনকে ভালবাসুন।। ছোট ছোট ব্যাপারগুলোকে এনজয় করুন।। তাহলে, যখন আপনি একসময় সব পেয়ে যাবেন, তখন নিজেকে নিজে বলতে পারবেন, “আমি লাইফটাকে প্রানভরে উপভোগ করেছি!!
Duronto Riyad

পড়ে আমি চোখের পানি ধরে রাখতে পারি নাই

                       (অর্থনীতিবিদ ড. আতিউর রহমানের নিজের ভাষায় তাঁর জীবন কথা)

“আমার জন্ম জামালপুর জেলার এক অজপাড়াগাঁয়ে। ১৪ কিলোমিটার দূরের শহরে যেতে হতো পায়ে হেঁটে বা সাইকেলে চড়ে। পুরো গ্রামের মধ্যে একমাত্র মেট্রিক পাস ছিলেন আমার চাচা মফিজউদ্দিন। আমার বাবা একজন অতি দরিদ্র ভূমিহীন কৃষক। আমরা পাঁচ ভাই, তিন বোন। কোনরকমে খেয়ে না খেয়ে দিন কাটতো আমাদের।আমার দাদার আর্থিক অবস্থা ছিলো মোটামুটি। কিন্তু তিনি আমার বাবাকে তাঁর বাড়িতে ঠাঁই দেননি। দাদার বাড়ি থেকে খানিকটা দূরে একটা ছনের ঘরে আমরা এতগুলো ভাই-বোন আর বাবা-মা থাকতাম। মা তাঁর বাবার বাড়ি থেকে নানার সম্পত্তির সামান্য অংশ পেয়েছিলেন। তাতে তিন বিঘা জমি কেনা হয়। চাষাবাদের জন্য অনুপযুক্ত ওই জমিতে বহু কষ্টে বাবা যা ফলাতেন, তাতে বছরে ৫/৬ মাসের খাবার জুটতো। দারিদ্র্য কী জিনিস, তা আমি মর্মে মর্মে উপলব্ধি করেছি- খাবার নেই, পরনের কাপড় নেই; কী এক অবস্থা !আমার মা সামান্য লেখাপড়া জানতেন। তাঁর কাছেই আমার পড়াশোনার হাতেখড়ি। তারপর বাড়ির পাশের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হই। কিন্তু আমার পরিবারে এতটাই অভাব যে, আমি যখন তৃতীয় শ্রেণীতে উঠলাম, তখন আর পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ থাকলো না। বড় ভাই আরো আগে স্কুল ছেড়ে কাজে ঢুকেছেন। আমাকেও লেখাপড়া ছেড়ে রোজগারের পথে নামতে হলো।আমাদের একটা গাভী আর কয়েকটা খাসি ছিল। আমি সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ওগুলো মাঠে চরাতাম। বিকেল বেলা গাভীর দুধ নিয়ে বাজারে গিয়ে বিক্রি করতাম। এভাবে দুই ভাই মিলে যা আয় করতাম, তাতে কোনরকমে দিন কাটছিল। কিছুদিন চলার পর দুধ বিক্রির আয় থেকে সঞ্চিত আট টাকা দিয়ে আমি পান-বিড়ির দোকান দেই। প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দোকানে বসতাম। পড়াশোনা তো বন্ধই, আদৌ করবো- সেই স্বপ্নও ছিল না !এক বিকেলে বড় ভাই বললেন, আজ স্কুল মাঠে নাটক হবে। স্পষ্ট মনে আছে, তখন আমার গায়ে দেওয়ার মতো কোন জামা নেই। খালি গা আর লুঙ্গি পরে আমি ভাইয়ের সঙ্গে নাটক দেখতে চলেছি। স্কুলে পৌঁছে আমি তো বিস্ময়ে হতবাক ! চারদিকে এত আনন্দময় চমৎকার পরিবেশ ! আমার মনে হলো, আমিও তো আর সবার মতোই হতে পারতাম। সিদ্ধান্ত নিলাম, আমাকে আবার স্কুলে ফিরে আসতে হবে।নাটক দেখে বাড়ি ফেরার পথে বড় ভাইকে বললাম, আমি কি আবার স্কুলে ফিরে আসতে পারি না ? আমার বলার ভঙ্গি বা করুণ চাহনি দেখেই হোক কিংবা অন্য কোন কারণেই হোক কথাটা ভাইয়ের মনে ধরলো। তিনি বললেন, ঠিক আছে কাল হেডস্যারের সঙ্গে আলাপ করবো।পরদিন দুই ভাই আবার স্কুলে গেলাম। বড় ভাই আমাকে হেডস্যারের রুমের বাইরে দাঁড় করিয়ে রেখে ভিতরে গেলেন। আমি বাইরে দাঁড়িয়ে স্পষ্ট শুনছি, ভাই বলছেন আমাকে যেন বার্ষিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগটুকু দেওয়া হয়। কিন্তু হেডস্যার অবজ্ঞার ভঙ্গিতে বললেন, সবাইকে দিয়ে কি লেখাপড়া হয় ! স্যারের কথা শুনে আমার মাথা নিচু হয়ে গেল। যতখানি আশা নিয়ে স্কুলে গিয়েছিলাম, স্যারের এক কথাতেই সব ধুলিস্মাৎ হয়ে গেল। তবু বড় ভাই অনেক পীড়াপীড়ি করে আমার পরীক্ষা দেওয়ার অনুমতি যোগাড় করলেন। পরীক্ষার তখন আর মাত্র তিন মাস বাকি। বাড়ি ফিরে মাকে বললাম, আমাকে তিন মাসের ছুটি দিতে হবে। আমি আর এখানে থাকবো না। কারণ ঘরে খাবার নেই, পরনে কাপড় নেই- আমার কোন বইও নেই, কিন্তু আমাকে পরীক্ষায় পাস করতে হবে।মা বললেন, কোথায় যাবি ? বললাম, আমার এককালের সহপাঠী এবং এখন ক্লাসের ফার্স্টবয় মোজাম্মেলের বাড়িতে যাবো। ওর মায়ের সঙ্গে আমার পরিচয় আছে। যে ক’দিন কথা বলেছি, তাতে করে খুব ভালো মানুষ বলে মনে হয়েছে। আমার বিশ্বাস, আমাকে উনি ফিরিয়ে দিতে পারবেন না।দুরু দুরু মনে মোজাম্মেলের বাড়ি গেলাম। সবকিছু খুলে বলতেই খালাম্মা সানন্দে রাজি হলেন। আমার খাবার আর আশ্রয় জুটলো; শুরু হলো নতুন জীবন। নতুন করে পড়াশোনা শুরু করলাম। প্রতিক্ষণেই হেডস্যারের সেই অবজ্ঞাসূচক কথা মনে পড়ে যায়, জেদ কাজ করে মনে; আরো ভালো করে পড়াশোনা করি।যথাসময়ে পরীক্ষা শুরু হলো। আমি এক-একটি পরীক্ষা শেষ করছি আর ক্রমেই যেন উজ্জীবিত হচ্ছি। আমার আত্মবিশ্বাসও বেড়ে যাচ্ছে। ফল প্রকাশের দিন আমি স্কুলে গিয়ে প্রথম সারিতে বসলাম। হেডস্যার ফলাফল নিয়ে এলেন। আমি লক্ষ্য করলাম, পড়তে গিয়ে তিনি কেমন যেন দ্বিধান্বিত। আড়চোখে আমার দিকে তাকাচ্ছেন। তারপর ফল ঘোষণা করলেন। আমি প্রথম হয়েছি ! খবর শুনে বড় ভাই আনন্দে কেঁদে ফেললেন। শুধু আমি নির্বিকার- যেন এটাই হওয়ার কথা ছিল।বাড়ি ফেরার পথে সে এক অভূতপূর্ব দৃশ্য। আমি আর আমার ভাই গর্বিত ভঙ্গিতে হেঁটে আসছি। আর পিছনে এক দল ছেলেমেয়ে আমাকে নিয়ে হৈ চৈ করছে, স্লোগান দিচ্ছে। সারা গাঁয়ে সাড়া পড়ে গেল ! আমার নিরক্ষর বাবা, যাঁর কাছে ফার্স্ট আর লাস্ট একই কথা- তিনিও আনন্দে আত্মহারা; শুধু এইটুকু বুঝলেন যে, ছেলে বিশেষ কিছু একটা করেছে। যখন শুনলেন আমি ওপরের কাসে উঠেছি, নতুন বই লাগবে, পরদিনই ঘরের খাসিটা হাটে নিয়ে গিয়ে ১২ টাকায় বিক্রি করে দিলেন। তারপর আমাকে সঙ্গে নিয়ে জামালপুর গেলেন। সেখানকার নবনূর লাইব্রেরি থেকে নতুন বই কিনলাম।আমার জীবনযাত্রা এখন সম্পূর্ণ বদলে গেছে। আমি রোজ স্কুলে যাই। অবসরে সংসারের কাজ করি। ইতোমধ্যে স্যারদের সুনজরে পড়ে গেছি। ফয়েজ মৌলভী স্যার আমাকে তাঁর সন্তানের মতো দেখাশুনা করতে লাগলেন। সবার আদর, যত্ন, স্নেহে আমি ফার্স্ট হয়েই পঞ্চম শ্রেণীতে উঠলাম। এতদিনে গ্রামের একমাত্র মেট্রিক পাস মফিজউদ্দিন চাচা আমার খোঁজ নিলেন। তাঁর বাড়িতে আমার আশ্রয় জুটলো।প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে আমি দিঘপাইত জুনিয়র হাইস্কুলে ভর্তি হই। চাচা ওই স্কুলের শিক্ষক। অন্য শিক্ষকরাও আমার সংগ্রামের কথা জানতেন। তাই সবার বাড়তি আদর-ভালোবাসা পেতাম।আমি যখন সপ্তম শ্রেণী পেরিয়ে অষ্টম শ্রেণীতে উঠবো, তখন চাচা একদিন কোত্থেকে যেন একটা বিজ্ঞাপন কেটে নিয়ে এসে আমাকে দেখালেন। ওইটা ছিল ক্যাডেট কলেজে ভর্তির বিজ্ঞাপন। যথাসময়ে ফরম পুরণ করে পাঠালাম। এখানে বলা দরকার, আমার নাম ছিল আতাউর রহমান। কিন্তু ক্যাডেট কলেজের ভর্তি ফরমে স্কুলের হেডস্যার আমার নাম আতিউর রহমান লিখে চাচাকে বলেছিলেন, এই ছেলে একদিন অনেক বড় কিছু হবে। দেশে অনেক আতাউর আছে। ওর নামটা একটু আলাদা হওয়া দরকার; তাই আতিউর করে দিলাম।আমি রাত জেগে পড়াশোনা করে প্রস্তুতি নিলাম। নির্ধারিত দিনে চাচার সঙ্গে পরীক্ষা দিতে রওনা হলাম। ওই আমার জীবনে প্রথম ময়মনসিংহ যাওয়া। গিয়ে সবকিছু দেখে তো চক্ষু চড়কগাছ ! এত এত ছেলের মধ্যে আমিই কেবল পায়জামা আর স্পঞ্জ পরে এসেছি ! আমার মনে হলো, না আসাটাই ভালো ছিল। অহেতুক কষ্ট করলাম। যাই হোক পরীক্ষা দিলাম; ভাবলাম হবে না। কিন্তু দুই মাস পর চিঠি পেলাম, আমি নির্বাচিত হয়েছি। এখন চূড়ান্ত পরীক্ষার জন্য ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে যেতে হবে।সবাই খুব খুশি; কেবল আমিই হতাশ। আমার একটা প্যান্ট নেই, যেটা পরে যাবো। শেষে স্কুলের কেরানি কানাই লাল বিশ্বাসের ফুলপ্যান্টটা ধার করলাম। আর একটা শার্ট যোগাড় হলো। আমি আর চাচা অচেনা ঢাকার উদ্দেশে রওনা হলাম। চাচা শিখিয়ে দিলেন, মৌখিক পরীক্ষা দিতে গিয়ে আমি যেন দরজার কাছে দাঁড়িয়ে বলি: ম্যা আই কাম ইন স্যার ? ঠিকমতোই বললাম। তবে এত উচ্চস্বরে বললাম যে, উপস্থিত সবাই হো হো করে হেসে উঠলো।পরীক্ষকদের একজন মির্জাপুর ক্যাডেট কলেজের অধ্যক্ষ এম. ডাব্লিউ. পিট আমাকে আপাদমস্তক নিরীক্ষণ করে সবকিছু আঁচ করে ফেললেন। পরম স্নেহে তিনি আমাকে বসালেন। মুহূর্তের মধ্যে তিনি আমার খুব আপন হয়ে গেলেন। আমার মনে হলো, তিনি থাকলে আমার কোন ভয় নেই। পিট স্যার আমার লিখিত পরীক্ষার খাতায় চোখ বুলিয়ে নিলেন। তারপর অন্য পরীক্ষকদের সঙ্গে ইংরেজিতে কী-সব আলাপ করলেন। আমি সবটা না বুঝলেও আঁচ করতে পারলাম যে, আমাকে তাঁদের পছন্দ হয়েছে। তবে তাঁরা কিছুই বললেন না। পরদিন ঢাকা শহর ঘুরে দেখে বাড়ি ফিরে এলাম। যথারীতি পড়াশোনায় মনোনিবেশ করলাম। কারণ আমি ধরেই নিয়েছি, আমার চান্স হবে না।হঠাৎ তিন মাস পর চিঠি এলো। আমি চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত হয়েছি। মাসে ১৫০ টাকা বেতন লাগবে। এর মধ্যে ১০০ টাকা বৃত্তি দেওয়া হবে, বাকি ৫০ টাকা আমার পরিবারকে যোগান দিতে হবে। চিঠি পড়ে মন ভেঙে গেল। যেখানে আমার পরিবারের তিনবেলা খাওয়ার নিশ্চয়তা নেই, আমি চাচার বাড়িতে মানুষ হচ্ছি, সেখানে প্রতিমাসে ৫০ টাকা বেতন যোগানোর কথা চিন্তাও করা যায় না !এই যখন অবস্থা, তখন প্রথমবারের মতো আমার দাদা সরব হলেন। এত বছর পর নাতির (আমার) খোঁজ নিলেন। আমাকে অন্য চাচাদের কাছে নিয়ে গিয়ে বললেন, তোমরা থাকতে নাতি আমার এত ভালো সুযোগ পেয়েও পড়তে পারবে না ? কিন্তু তাঁদের অবস্থাও খুব বেশি ভালো ছিল না। তাঁরা বললেন, একবার না হয় ৫০ টাকা যোগাড় করে দেবো, কিন্তু প্রতি মাসে তো সম্ভব নয়। দাদাও বিষয়টা বুঝলেন।আমি আর কোন আশার আলো দেখতে না পেয়ে সেই ফয়েজ মৌলভী স্যারের কাছে গেলাম। তিনি বললেন, আমি থাকতে কোন চিন্তা করবে না। পরদিন আরো দুইজন সহকর্মী আর আমাকে নিয়ে তিনি হাটে গেলেন। সেখানে গামছা পেতে দোকানে দোকানে ঘুরলেন। সবাইকে বিস্তারিত বলে সাহায্য চাইলেন। সবাই সাধ্য মতো আট আনা, চার আনা, এক টাকা, দুই টাকা দিলেন। সব মিলিয়ে ১৫০ টাকা হলো। আর চাচারা দিলেন ৫০ টাকা। এই সামান্য টাকা সম্বল করে আমি মির্জাপুর ক্যাডেট কলেজে ভর্তি হলাম। যাতায়াত খরচ বাদ দিয়ে আমি ১৫০ টাকায় তিন মাসের বেতন পরিশোধ করলাম। শুরু হলো অন্য এক জীবন।প্রথম দিনেই এম. ডাব্লিউ. পিট স্যার আমাকে দেখতে এলেন। আমি সবকিছু খুলে বললাম। আরো জানালাম যে, যেহেতু আমার আর বেতন দেওয়ার সামর্থ্য নেই, তাই তিন মাস পর ক্যাডেট কলেজ ছেড়ে চলে যেতে হবে। সব শুনে স্যার আমার বিষয়টা বোর্ড মিটিঙে তুললেন এবং পুরো ১৫০ টাকাই বৃত্তির ব্যবস্থা করে দিলেন। সেই থেকে আমাকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। এস.এস.সি পরীক্ষায় ঢাকা বোর্ডে পঞ্চম স্থান অধিকার করলাম এবং আরো অনেক সাফল্যের মুকুট যোগ হলো।আমার জীবনটা সাধারণ মানুষের অনুদানে ভরপুর। পরবর্তীকালে আমি আমার এলাকায় স্কুল করেছি, কলেজ করেছি। যখন যাকে যতটা পারি, সাধ্যমতো সাহায্য সহযোগিতাও করি। কিন্তু সেই যে হাট থেকে তোলা ১৫০ টাকা; সেই ঋণ আজও শোধ হয়নি। আমার সমগ্র জীবন উৎসর্গ করলেও সেই ঋণ শোধ হবে না!

বিদ্রোহ দমনে পুলিশ টিয়ারশেল, পিপার স্প্রে, গরম পানি ব্যবহার করতে পারে

পুলিশকে এভাবে গুলি চালানোর নির্দেশ কে দিয়েছে জানি না। রাবার বুলেটের বদলে কেন আসল বুলেট চালানো হচ্ছে তাও বুঝতে পারছি না।
কিন্তু এতটুকু বুঝি প্রতিটা জীবনের দাম আছে। জঘন্য অপরাধীকেও হত্যা করা হয় বিচারের মাধ্যমেই (আজকেও যার একটা নিদর্শন আমরা পেয়ছি)। সেখানে নির্বিচারে গুলি করে মানুষ হত্যা কোন সভ্য সমাজের সভ্য ব্যাক্তির কাজ হতে পারে না।
আজ দেশে এখন পর্যন্ত ২৬জন মারা গেছে। এরা দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর বিরুদ্ধে দেয়া রায়ের প্রতিবাদ করতে গিয়ে পুলিশের সাথে সংঘর্ষে মারা গেছে। এদের প্রতিটা জীবনের মূল্য আছে। আমরা একটি মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার করতে গিয়ে আরেকটি মানবতাবিরোধী অপরাধ করতে পারি না।
বিদ্রোহ দমনে পুলিশ টিয়ারশেল, পিপার স্প্রে, গরম পানি ব্যবহার করতে পারে। এভাবে গুলি কেন চালাবে? প্রয়োজন হলে আইনের মাধ্যমে শাস্তি নিশ্চিত করেন।

শুক্রবার, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১২

রসায়নের পর্যায় সারণী মনে রাখার সহজ কৌশল!!

সালাম ও শুভেচ্ছা জানিয়ে শুরু করছি। আশাকরি সকলে ভালো আছেন। আমিও মহান আল্লাহর রহমতে খুব ভালো আছি। এই ব্লগের অধিকাংশ ব্লগার ও পাঠক ভাই বোনেরা স্টুডেন্ট তাই আজ আমি আপনাদের জন্য এমন একটা পোষ্ট করব যেটা ছাত্র ছাত্রীদের জন্য খুব কাজে লাগবে।

বিশেষ করে বিজ্ঞান বিভাগের। আমরা জানি রসায়ন শাস্ত্রের পর্যায় সারণী মনে রাখা খুবই কঠিন তাই আপনাদের সাথে এমন একটা কৌশল শেয়ার করছি যেটা মুখস্থ করলে পর্যায় সারনী মনে রাখা খুব সহজ হয়ে যাবে। তাই এক্ষুনি মুখস্থ করে ফেলুন।
গ্রুপ 1A: H Li Na K Rb Cs Fr
হায়রে! লি না কে রুবি সাজাবে ফ্রান্সে !
গ্রুপ 2A : Be Mg Ca Sr Ba Ra
বেগুনী, মোগলাই, কাবাব সরিয়ে বাটিতে রাখ ।
গ্রুপ 3A : B Al Ga In Tl
বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ গেলো ইন্ডিয়ার তালে!
গ্রুপ 4A: C Si Ge Sn Pb
চলো, সিলেট গেলে সানগ্লাস পাব ।
গ্রুপ 5A: N P As Sb Bi
নদীতে পানি আসে সব বিকালে ।
গ্রুপ 6A : O S Se Te Po
ও এস এসসি তে পড়ে ।
গ্রুপ 7A : F Cl Br I At
First Class British Indian Architect.
ল্যান্থানাইডঃ Ce Pr Nd Pm Sm Eu Gd Tb Dy Ho Er Tm Yb Lu
ছেলে , প্রীতি এন্ড পমসম । ইউরোপ গুড, তবে ডাইরিয়া হয় । আর টমেটো ইয়লো ব্লু !
অ্যাক্টিনাইডঃ Th Pa U Np Pu Am Cm Bk Cf Es Fm Md No Lr
থাকলে পাশে ইউ এনপি, পুঁথি আমার কমেনা। বিকেলে ক্যাফেতে আইনস্টাইন FM, মুড নষ্টের লহর ।
পর্যায়-১ : H He
Hi! He
পর্যায়-২ : Li Be B C N O F Ne
Lies Because Boron Can Not Oxide Florine and Neon.
পর্যায়-৩ : Na Mg Al Si P S Cl Ar
Nations Might Also Sign Peace Security Clause Argument.
পর্যায়-৪: Sc Ti V Cr Mn Fe Co Ni Cu Zn.
Scachin Tiendulkar Very (good) Cricketer Man (of the match) Feor (the) Country Niot (for) CuZn ((cousin))
পর্যায়-৫: Y Zr Nb Mo Tc Ru Rh Pd Ag Cd
Y and Z – two friends – sing “Namba Teacher R-square” (Our teacher R-square) from “Paddy Again” to a Cd.
সবাইকে অনেক ধন্যবাদ।

বৃহস্পতিবার, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১২

আপনার জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বরের গোপন সংকেত বা মানে জানুন!

বাংলাদেশী হিসাবে আমাদের অনেকের ই জাতীয় পরিচয় পত্র আছে। অনেকে এটাকে ভোটার আইডি কার্ড হিসাবে বলেন যেটা সম্পুর্ণ ভুল। এটা ন্যাশনাল আইডি কার্ড বা জাতীয় পরিচয় পত্র।

আপনারা দেখবেন এটার নীচে লাল কালি দিয়ে লেখা ১৩ সংখ্যার একটা নম্বর আছে যাকে আমরা আইডি নম্বর হিসাবে জানি
কিন্তু এই ১৩ সংখ্যার মানে কি?
1. প্রথম সংখ্যা – জেলা কোড। ৬৪ জেলার আলাদা আলাদা কোড আছে। ঢাকার জন্য এই কোড ২৬
2. পরবর্তী সংখ্যা – এটা আর এম ও (RMO) কোড।
  • সিটি কর্পোরেশনের জন্য –
  • ক্যান্টনমেন্ট –
  • পৌরসভা –
  • পল্লী এলাকা -
  • পৌরসভার বাইরে শহর এলাকা –
  • অন্যান্য –
3. পরবর্তী সংখ্যা – এটা উপজেলা বা থানা কোড
4. পরবর্তী সংখ্যা – এটা ইউনিয়ন (পল্লীর জন্য) বা ওয়ার্ড কোড (পৌরসভা বা সিটি কর্পোরেশনের জন্য)
5. শেষ সংখ্যা – আই ডি কার্ড করার সময় আপনি যে ফর্ম পূরণ করেছিলেন এটা সেই ফর্ম নম্বর।
বর্তমানে আবার ১৭ ডিজিট ওয়ালা আইডি কার্ড দেয়া হচ্ছে যার প্রথম ডিজিট হচ্ছে জন্মসাল!
জানুন এবং সব্বাইকে জানান!
ধন্যবাদ ।

শনিবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০১২

হয়নি ভোলা

(*) চচ্ঞল সেই মুক্ত বিহঙ্গ,
দুরোগ্য ক্যান্সারে ছডিয়েছে সব অঙ্গ,
নড় বড়ে শরীরে পড়ে আছে অ্যাপলো হাসপাতালের সিটে,
ক্ষীন চোখে মোর দিকে চেয়ে হাসে মিট মিটে।

(*) মৃদু ইশারা দিয়ে মোরে পাশে ডাকে,
ফ্যালফ্যালো চোখে চেয়ে থাকে মোর দিকে।
কাঁপাকাঁপা গলায় বলে আমায়,
এই ফ্যানটা বন্ধ করা যায় ?
এর ঘনঘন শব্দটা আমার কাছে কান্নার মত মনে হয়,
চার দেয়ালে এই ছোট রূমে তার প্রতিধ্‌বনি বয়ে যায়।

(*) কতটা পথ না হেটেছি দুইজনে,
ঘুরছি বহু দুর অজানা কোন নির্জনে,
কখনো দর্শক হয়ে আবহানী মাঠে;
কখনো বা জমবেশ আড্ডায় ফিজা হাঠে,
ছুটে চলা সে দিন গুলোতে গুলশান একে,
হাতে হাত রেখে ঘুরে বেড়ানো ধানমন্ডি লেকে।
যার মুখের দিকে চেয়ে মোর কষ্ট হতো শীতল,
সেই মুখের হা্সি আজ কেন এতো বিরল ,

(*) একটু পরে সে গম্ভীর গলায় বলে,
মাঝখানে কত জোছনা গেলো চলে,
আজ এসেছো তুমি সময়ের ক্রান্তি লগ্নে;
আরেকটু পরে আমি হবো গভীর ঘুমে মগ্ন।

(*) আমার শিরা উপশিরায় রক্ত চলাচল থেমে যাচ্ছে,
তোমার  মাথায় হাত রাখতে খুব ইচ্ছে করছে।
স্র্রর্গের সুবাস মোর নাকে আসে,
আমার সমস্ত দেহ তাতে ভাসে।।

(*) চোখের পলকে হারিয়ে গেল সে মোর কাছ থেকে;
আমি চেয়ে থাকি তার নিষ্পাপ চোখের দিকে।
চৌবাচ্চের মধ্যে বৃহত সূ্র্যের প্রতিবিম্বের মত;
মোর হৃদয়ে তার প্রতিচ্ছবি উজ্জ্ব্ল হবে তত।

(*) মোর নয়নের সলিলের অঝর ধারায়;
আজ সে প্রতিচ্ছবি ও উজ্জ্ব্ল হয়ে যায়।
একাকি জোছনা দেখা মোর হৃদয়ে দিচ্ছে দোলা,
আজ যে তোমার জন্মদিন হয়নি ভুলা।


                      লিখেছেন রিংকু রক (Rinku Rock)

                      fb ID : https://www.facebook.com/rinku.rock.90

শুক্রবার, ৭ সেপ্টেম্বর, ২০১২

সকলের জন্য একটি সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি। প্লিজ এখনি সতর্ক হোন।


সাবধান হন এখনি। আপনিও হতে পারেন সিম ক্লোনের শিকার। হাঁ ভয়ানক এই তথ্যটি জানতে পারি একুশে টিভির এক বন্ধুর মাধ্যমে। পরে বিষয়টি সম্পর্কে আরও স্পষ্ট ধারনা পেতে একুশে টি ভির নিউজ দেখে শিওর হলাম মাত্র।
১- সিম ক্লোন কি?
একটি সিম যেটি আপনি ব্যবহার করছেন সেই সিম টি যদি অন্য কেউ ব্যবহার করে কিংবা এক নাম্বার যদি দেখেন এক সাথে দুইজন ব্যবহার করে কিংবা হঠাৎ করে যদি দেখেন আপনার সেল ফোনের কানেকশন নাম্বার থেকে ব্যালান্স কোন কারন ছাড়া কমে যাচ্ছে তবে আপনি সিম ক্লোনের শিকার।

২- কিভাবে শিকার হবেন সিম ক্লোনের?
আপনি যদি অপরিচিত কোন নাম্বার থেকে মিসড কল পান এবং সেটাতে যদি কল ব্যাক করেন তবে আপনি সিম ক্লোনিং এর শিকারে পরিনত হতে পারেন। দুষ্কৃতকারীরা বিশেষ একটি সফটওয়্যার এর মাধ্যমে আপনার নাম্বার টি ক্লোনিং করে। অর্থাৎ আপনি যখন মিসড কল নাম্বারে কল ব্যাক করবেন তখন একটি সফটওয়্যার এর মাধ্যমে আপনার নাম্বার টি ক্লোন হতে পারে। সিম ক্লোনিং হলে আপনার সিমে রাখা ডাটা ক্লোন নাম্বারে চলে যাবে। এবং আপনার প্রাইভেসি ক্ষুণ্ণ হবে।

৩- যে সমস্যায় আপনি পড়তে পারেন সিম ক্লোনিং হয়ে গেলে?
সাধারনত জঙ্গি কিংবা দুষ্কৃতিকারীরা আপনার নাম্বার টি ব্যবহার করে আপনার জীবন বিপন্ন করতে পারে। অর্থাৎ ওই নাম্বার দিয়ে কেউ কাউকে মৃত্যুর হুমকি, চাঁদাবাজি কিংবা জঙ্গি কানেকশন করলে আপাত দায়ভার আপনার উপর বর্তাবে। কাজেই আপনি আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধৃত হবেন। পরবর্তীতে আরও নানাবিধ সমস্যায় পড়তে পারেন।

লক্ষ্য করুন-----------
* ভারতে সম্প্রতি এক লাখ সিম ও রিম কার্ড ক্লোনিং হয়েছে। সেখানকার গোয়েন্দা বাহিনী সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা জানিয়েছে ওই ক্লোনিং সিম বা রিমের মাধ্যমে অনেক অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে।
* বাংলাদেশে এখনও সিম ক্লোনিং হয়েছে বলে ৬ টি মোবাইল অপারেটরের হাতে এমন কোন তথ্য নেই। তবে বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থা জানিয়েছে যে কোন সময় এমন অনাকাংখিত ঘটনা ঘটতে পারে।

সতর্ক হবেন যেভাবে-
* অপরিচিত নাম্বার থেকে মিসড কল এলে আপনি কল ব্যাক করার পূর্বে ভালো করে চিহ্নিত করবার চেষ্টা করুন যে এটি কার নাম্বার। অথবা কল ব্যাক করা বন্ধ করুন।
* মনে রাখবেন সিম ক্লোনিং হতে হলে মিসড কল আসবে। ডাইরেক্ট রিং হলে সেটি রিসিভ করলে আপনি সিম ক্লোনিং এর শিকার হবেন না। মিসড কল এলেই সতর্ক হন।
* যদি দেখেন আপনার সেল ফোনের ব্যালান্স অকারণে কমে যাচ্ছে সাথে সাথে কল সেন্টারে ফোন করে জানান।
* আপনার সেল ফোন টি এখনি বন্ধ করে অন্য একটি নাম্বার থেকে আপনার নাম্বারে ফোন দিন। দেখুন রিং হয় কিনা। রিং হলে আপনি সিম ক্লোনিং এর শিকার।

..................................................................
সকলে সতর্ক হন। অন্যকে বিষয়টি জানান। পারলে কথা গুলো শেয়ার করুন।
ভালো থাকুন। নিরাপদে থাকুন।

বৃহস্পতিবার, ৬ সেপ্টেম্বর, ২০১২

হ্যাক হবে না ফেসবুক অ্যাকাউন্ট!

আপনার ফেসবুকের পাসওয়ার্ড যদি সবাই জেনে যায়, তাহলেও কেউ আপনার অ্যাকাউন্টে প্রবেশ করতে পারবে না। এর জন্য প্রথমে ফেসবুকে লগইন করে ওপরে ডান পাশে Home এর পাশে অ্যারোতে ক্লিক করে Account Settings-এ ক্লিক করুন বা সরাসরি www.facebook.com /settings?ref=mb ঠিকানায় যান। এখন বাঁ পাশ থেকে Security-তে ক্লিক করুন। এখন Login Approvals-এর ডান পাশ থেকে edit-এ ক্লিক করুন। তারপর Require me to enter a security code…বক্সে টিকচিহ্ন দিন। টিকচিহ্ন দেওয়ার সময় নতুন একটি বার্তা এলে Set Up Now-এ ক্লিক করুন। এখন Phone number বক্সে আপনার মোবাইল নম্বর লিখে Continue তে ক্লিক করুন। আপনার মোবাইলে একটি কোড নম্বর আসবে। কোড নম্বরটি কোড বক্সে লিখে Submit Code বাটনে ক্লিক করে Close-এ ক্লিক করুন। (Login Notifications-এর ডান পাশ থেকে edit-এ ক্লিক করে Email এবং Text message বক্সেও টিকচিহ্ন দিয়ে Save-এ ক্লিক করে রাখতে পারেন।) এখন ফেসবুক অ্যাকাউন্ট লগআউট করে পুনরায় আবার ফেসবুকে লগইন করুন।
দেখবেন Name New Device নামে একটি পেজ এসেছে। সেখানে Device name বক্সে কোনো নাম লিখে Save Device-এ ক্লিক করুন। এখন থেকে প্রতিবার আপনার কম্পিউটার ছাড়া অন্য কারও কম্পিউটার থেকে আপনার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে লগইন করতে চাইলে আপনার মোবাইলে একটি কোড নম্বর আসবে এবং সেই কোড নম্বরটি কোড বক্সে লিখে Continue তে ক্লিক করলেই আপনার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে প্রবেশ করা যাবে। কাজেই আপনার ফেসবুকের পাসওয়ার্ড সবাই জানলেও কেউ আপনার ফেসবুকে লগইন করতে পারবে না।

সোমবার, ১৩ আগস্ট, ২০১২

জিপিএ এর ভিত্তিতে মেডিকেলে ভর্তি :: কিন্তু মাননীয় মন্ত্রী মহোদয় কি ব্যাপারগুলো ভেবে দেখেছেন??

মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষার ঠিক দু’মাস আগে চট করে আজকে মাননীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী ঘোষণা করলেন পরীক্ষা বাতিল, ভর্তি নেয়া হবে জিপিএর ভিত্তিতে। এর কারন হিসেবে পত্রিকায় যেটা এসেছে তা হল
> কোচিং-বাণিজ্য বন্ধ করতে।
>প্রতিবছর ভর্তির জন্য ৫০-৬০ হাজার ছাত্রছাত্রীর পরীক্ষা নেওয়ার সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসা দরকার।
>গত বছর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ছাপাখানা থেকে প্রশ্নপত্র ফাঁসের চেষ্টা, পরীক্ষার আগে ভুয়া প্রশ্নপত্র বেচাকেনাসহ নানা ধরনের সমস্যা ।
সূত্র: ১. প্রথম আলো ২.bdnews24.com


এ বিষয়ে যে ব্যাপারগুলো ভাবা উচিত তার একটা লিস্ট দিচ্ছি, জানি না সেটা স্বাস্থ্যঅধিদপ্তরের চোখে পড়বে কিনা

১.
ধরা যাক, এবছর সেটা বাস্তবায়ন হল, তাহলে ব্যাপার কি দাঁড়াবে। এতদিন ধরে হাজার হাজার স্টুডেন্ট মেডিকেলের জন্য যারা প্রিপারেশন নিচ্ছিল তাদের মধ্যে এসএসসি এবং এইচএসসি তে গোল্ডেন এ+ ছাড়া বাকী সবাই আক্ষরিক অর্থেই পানিতে পড়বে। কারন মেডিকেলে সবমিলিয়ে আসন প্রায় তিনহাজারের কিছু বেশি। আর আমাদের গত কয়েক বছরের জিপিএ ৫ এর সংখ্যাটা এক ঝলক দেখুন-

এসএসসিঃ
২০১০ সালে জিপিএ ৫ পেয়েছে = ৬২ হাজার ১৩৪ জন।
২০১১ সালে জিপিএ ৫ পেয়েছে = ৭৬ হাজার ৭৪৯ জন
২০১২ সালে জিপিএ ৫ পেয়েছে = ৮২ হাজার ২১২ জন।

এইচএসসিঃ
২০১০ সালে জিপিএ ৫ পেয়েছে = ২৮ হাজার ৬৭১ জন।
২০১১ সালে জিপিএ ৫ পেয়েছে = ৩৯ হাজার ৭৬৯ জন
২০১২ সালে জিপিএ ৫ পেয়েছে = ৬১ হাজার ১৬২ জন


তারমানে জিপিএ ৫ এর নীচে যারা তারা তো হিসাবের বাইরেই, এমনকি যে ছেলেমেয়েগুলো দুবারই গোল্ডেন এ+ পায় নি, তাদের সবারই এতদিনকার স্বপ্ন এবং পরিশ্রম ব্যর্থ হয়ে গেল। এবং যারা মেডিকেলে চান্স পেত নিজ পাঠ্যপুস্তকে দখল এবং মারাত্মক পরিশ্রমের মাধ্যমে তাদের অধিকাংশই কোন জায়গাতেই চান্স পাবে না। কারন মেডিকেলের ভর্তির প্রিপারেশন ভাল মত যারা নেয় তারা অন্য কোন পাবলিক ইউনিভার্সিটিতে প্যাটার্ন ভিন্ন হওয়ার কারনে চান্স পাবে না। এই বিশাল পরিমান ছাত্রছাত্রীদের পরিশ্রমের মূল্য কী রইলো? মাঝামাঝি সময়ে এসে তাদের জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান সিদ্ধান্তকে মূল্যহীন করে দেয়া কতটুকু যৌক্তিক?

২.

কোচিং বাণিজ্য বন্ধই যদি এ সিদ্ধান্তের উদ্দেশ্য হয় তাহলে ব্যাপারটা কেমন সিদ্ধান্ত হয় সেটা ভাববার বিষয়। কোচিং বাণিজ্য বলতে হয়তো দুটো ব্যাপারকে বোঝানো হচ্ছে, এক কোচিং এ পাঠ্য বইগুলো পড়ানোর বিনিময়ে মোটা টাকা নেয়। আর দ্বিতীয় হচ্ছে কোন কোন কোচিং এর নামে অভিযোগ আছে তারা প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় জড়িত।
এখন প্রথমটাতে যদি নীতিনির্ধারকদের আপত্তি থাকে, অর্থাৎ কোচিং বেশি বেশি টাকা নিচ্ছে তাহলে সমস্ত কোচিং গুলোর জন্য নীতিমালা প্রণয়ন করে কিংবা কোচিংগুলোর রেজিস্ট্রেশন বাতিল করা যেতে পারে।
কিন্তু এটা বন্ধ করতে পরীক্ষা বাতিল করাটা হল ঠিক মাথা ব্যথার জন্য মাথা কাটার মত। কোচিং তোমার থেকে টাকা নিচ্ছে, ওকে তোমার পরীক্ষা দেয়া বন্ধ, মেডিকেলে পড়ার আশা কোর না, তাহলে কোচিংগুলোও তোমাকে ঠকাতে পারবে না। প্রবলেম সলভড!:|
আর এবছর কোচিং গুলো যা টাকা নেবার তা নিয়ে নিয়েছে, সুতারাং এ বছর যারা কোচিংয়ের পিছনে তাদের টাকা ব্যয় করে ফেলেছে তাদের সুবিধাটা কি হবে? এখানে অনেকেই আছে নিম্নবিত্ত ঘরের সন্তান, টিভিতে দেখলাম একজন পিতা তার সন্তানকে মেডিকেল কোচিং এ ভর্তি করিয়েছেন তার গরু বেচে। এই ছেলেগুলোর মত স্টুডেন্টরা অন্যবিষয়ে প্রিপারেশন নেয়ার জন্য অর্থনৈতিক সহায়তা কীভাবে পাবে, তাদের এতদিনকার অর্থনৈতিক ক্ষতি আর শ্রমের মূল্য কে দেবে?
দ্বিতীয়ত, প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনা কোচিংয়ের মাধ্যমে ঘটতে পারে, তাই পরীক্ষা বাতিল। প্রশ্নফাঁস হবার মত ঘটনা এক ধরনের প্রশাসনিক দুর্বলতা, প্রশ্ন কোচিং সেন্টার তৈরি করে না। তারমানে সেটা যখন ফাঁস হয় সেটা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিজস্ব সিস্টেমের ব্যর্থতা। সেটার দায়ভার এড়াতে যদি পরীক্ষা বাতিল করা হয় তাহলে ব্যাপারটা আর কোচিংকেন্দ্রিক থাকে না। ঘরে আসবাবপত্র চুরি হতে পারে সেইভয়ে বাড়ির নিরাপত্তা ব্যবস্থা উন্নত না করে আসবাবপত্র কিছু না কিনে খালি ঘরে বাস করার মত- ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়।
কেন এ দায়ভার ছাত্রছাত্রীরা বহন করবে?

৩.
জিপিএ আমাদের দেশে একটি মূল্যবান মাপকাঠি সন্দেহ নেই। কিন্তু সেটাই কী ১০০ ভাগ নির্ভেজাল?আমরা সাধারণ যে কেউ জানি সেটা নয়। কারন প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে দারুন মেধাবী ছাত্রছাত্রীরা ভাল জিপিএ পায় না, আবার ভাল ভাল স্কুল গুলোতে গড়পড়তা সবাই ভাল জিপিএ পেয়ে যায়। প্রত্যন্ত অঞ্চলের এসব মেধাবী ও পরিশ্রমী ছেলেমেয়ে গুলোর অনেকেই এতদিন পর্যন্ত মেডিকেলে পড়ার সুযোগ পেয়েছে। জিপিএর ভিত্তিতে ভর্তি চালু করলে এসব অদম্য মেধাবীদের কি দমিয়ে রাখা হবে না?

৪.
ইংলিশ মিডিয়ামের থেকে প্রতিবছর অনেক ছেলেমেয়ে মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে ভর্তি হচ্ছে, তাদের সিস্টেমের সাথে প্রচলিত আমাদের জিপিএর কোন মিলই নেই বলা চলে। তাদের ক্ষেত্রে তারমানে নতুন কোন ধরনের মাপকাঠি নির্ধারণ করা হবে। কিন্তু সেটা কতটুকু সার্থক পদ্ধতি হবে ? এ পদ্ধতি প্রণয়ন দীর্ঘদিনের অ্যানালাইসিস ছাড়া চট করে কীভাবে করা সম্ভব?

৫.

অনেকেই আছে যারা গত বছরে চান্স না পাওয়াতে এবার আবার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। তারা তাদের শিক্ষাজীবনের দীর্ঘ একটা সময় একটা লক্ষ্যে পৌঁছবার জন্য পরিশ্রম করে যাচ্ছিল। চট করে এমন একটা সিদ্ধান্তে তাদের
এতদিনকার স্বপ্ন এবং শ্রম কীভাবে ভেঙে পড়বে চিন্তা করে দেখুন। আগে থেকে জানলে হয়তো তারা অন্যকোন বিষয়ে পড়বার জন্য সে শ্রমটা দিত। এ ধরনের ছাত্রছাত্রীদের সমস্ত শ্রম, স্বপ্ন এ সিদ্ধান্তে কি ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে না?

৬.
মেডিকেল কোচিং বন্ধ হলেই কি কোচিং ব্যবসা আদৌ বন্ধ হচ্ছে। ভর্তি পরীক্ষার কোচিং বন্ধ হলে এইচএসসি, এসএসসি তে চলমান স্যারদের প্রাইভেট বাণিজ্য এবং কোচিংগুলো অনেক বেশি আগ্রাসী হয়ে পড়বে। স্যারদের হাতে প্রাকটিকালের নাম্বার থাকে, সে সব ক্ষেত্রে প্রাইভেট পড়ানো স্যারদের দৌড়াত্ম বাড়বে ভীষণরকম। কলেজে কলেজ সংঘর্ষ থাকে, নির্দিষ্ট কলেজের ছাত্ররা এমন সংঘর্ষযুক্ত কলেজের টিচারদের হাতে বলি হবে প্র্যাকটিকালের নাম্বারের কারনে। এখনকার মেডিকেল কোচিংগুলোই দেখা যাবে এসএসসি আর এইচএসসি কোচিং এ পরিণত হয়ে গেছে। যেই লাউ সেই কদুই হবে ঘুরে ফিরে, বরঞ্চ স্কুল কলেজে ছাত্র-ছাত্রীরা অনেক বেশি ভোগান্তির সম্মুখিন হবে। তাহলে কোচিং ব্যবসা বন্ধের ধুঁয়া তুলে কী লাভ হবে?

৭. আমরা কিছুদিন আগেও দেখেছি কলেজ ভর্তির ক্ষেত্রে বয়সের মানদন্ড নামক ব্যাপার চালু হয়েছিল, যা এক বছর পরই হাস্যকর হিসেবে প্রমাণিত হয়। ক্ষতি যাদের হওয়ার হয়েই গেল। অনেক ভাল ভাল ছেলেমেয়ে ভাল কলেজে পড়ার চান্স পেল না। মেডিকেল ভর্তির নতুন পদ্ধতিও যে এরকম বর্জনীয় হবে না সেটার পর্যাপ্ত অ্যানালাইসিস না করে কীভাবে চট করে সেটা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। কলেজ না হয় কারো ক্যারিয়ারকে পুরো ধ্বংস করতে পারে না। কিন্তু আন্ডারগ্রাজুয়েট পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের এভাবে গিনিপিগ বানানোর ক্ষেত্রে আরো সতর্কভাবে কি এগুনো উচিৎ নয়?

৮. প্রতি বছর ৫০-৬০ হাজার পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষা নেয়ার সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে ৬০-৭০ হাজার জিপিএ থেকে মেডিকেলের জন্য শিক্ষার্থী বাছাই করাটা কতটুকু সুবিধাজনক?


                                                                                                                    *  লিখেছেন মাসুদুল হক


আমরা কি একটা সুযোগও পেতে পারি না?

অভি (ছদ্মনাম) এবার উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়ে মেডিকেল ভর্তি কোচিং করছে। স্বপ্ন একটি সরকারী মেডিকেলে চান্স পাবে। কোচিং এর শুরুর দিন থেকে দিন রাত পড়াশোনা। রুম থেকে যেন বেরই হয় না। কোচিং, খাওয়া আর পড়া। ওর বাবা দিন মজুর। তবুও অনেক কষ্টে টাকা জোগাড় করে ছেলেকে কোচিং করতে পাঠিয়েছে। অভিকে একদিন জিজ্ঞেস করলাম, তোমার পড়াশোনার কি খবর? বলল, ভাইয়া, আমার তো এসএসসি এবং এইচএসসি এর জিপিএ আট দশমিক পাঁচ। তাই খুব ভালো করে পড়ছি। যেন ভর্তি পরীক্ষায় ভালো করতে পারি। বললাম, তুমি কি ভর্তি পরীক্ষায় এই গ্যাপ কভার করতে পারবে? বলল, এর আগে এমন অনেক নজির আছে যারা শুধু মাত্র ন্যুনতম আবেদন করার যোগ্যতা ছিল মাত্র, তারপরেও এই কয়টা দিনের পড়াশোনায় মেডিকেলে চান্স পেয়ে গেছে। আমি পাব না কেন? ওর আত্মবিশ্বাস দেখে আমিও আশায় বুক বাধলাম। ঠিকই তো ভর্তি পরীক্ষায় ভালো করলে তো চান্স পাওয়া আসলেই সম্ভব।

মীম (ছদ্মনাম) গত বছর মেডিকেল কোচিং করেও চান্স পায় নি। তারপরও অবশ্য অন্য কোন জায়গায় ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেয় নি। কারণ, ওর জীবনের একটা মাত্র লক্ষ্য, ও ডাক্তার হবে। লক্ষে স্থির থাকতে ও এবার আবার কোচিং করছে। অবশ্য ওর এসএসসি এবং এইচএসসি পরীক্ষার জিপিএ ভালো ছিল না। কিন্তু আত্মবিশ্বাস এটাই ও দুটি বছর অনেক পড়েছে। অনেক ভালো প্রস্তুতি ওর। বই এর কোথায় কি আছে ও বলে দিতে পারে। এখন শুধু ওই দিনটার জন্য অপেক্ষা যেদিন পরীক্ষার প্রশ্ন পেয়েই বলতে পারে, আমি পেরেছি। আমার সুযোগ আমি কাজে লাগাতে পেরেছি।

উপরের দুইটা ঘটনাই বর্তমান সময়ের খুব স্বাভাবিক ব্যাপার। ভর্তি কোচিং করতে আসা হাজার শিক্ষার্থীদের স্বপ্ন তাদের কষ্টটা যেন বৃথা না যায়। হয়ত ভাগ্য দোষে অথবা নিজেদের উদাসীনতায় যারা এসএসসি অথবা এইচএসসি পরক্ষায় ভালো করতে পারে নি, তাদের অনেকেরই ভর্তি পরিক্ষার আগে হুশ ফেরে। কঠোর পরিশ্রমে অনেকেই ছিনিয়ে আনে সাফল্যের মুকুটটি। মেডিকেল ভর্তি পরিক্ষার বিগত বছর গুলোর ফলাফল বিশ্লেষণ করলে খুব ভালো করেই দেখা যায় যে যারা চান্স পেয়েছে তাদের যে সবারই এসএসসি এবং এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ পাঁচ ছিল তা নয়। অধিকাংশই চান্স পায় যাদের জিপিএ কম ছিল অথচ ভালো করে পরবর্তিতে পড়াশোনা করেছে। শুধু মাত্র জিপিএ ভালো বলে অনেক ছেলে মেয়ে আছে এই গর্বেই পড়াশোনা করে না। তাই ভালো কোথাও চান্সও পায় না। ভর্তি পরীক্ষায় এই কথাটা খুব বেশি প্রচলিত যারা এইচএসসি এর পরের কয়টা মাস মন দিয়ে পড়বে, সময়টা কাজে লাগাবে তারা চান্স পাবে। হয় ও তাই। অনেক তথা কথিত ভালো ছাত্র বা ছাত্রি আছে যারা সময়তা কাজে না লাগানর কারনে ঝরে যায় অথবা আশানুরুপ জায়গায় চান্স পায় না। এরকম হাজার নজির আছে।

আমি বুঝলাম না। কি বুঝে কর্তৃপক্ষ এই আত্মঘাতি সিদ্ধান্ত নিলেন? উপরে উল্লেখিত এই কমল মতি দুই জনছাত্র ছাত্রীর মত হাজার শিক্ষার্থী কি অপরাধ করেছিল? এত কষ্ট করে স্বপ্ন বাঁচাতে রাতের পর রাত ঘুম বাদ দিয়ে যারা আগের ভুল সংশোধন করে নতুন করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে সচেষ্ট, তাদের দশটা কোথায়? নাকি সরকার মনে করছে যে ভুল তো ভুলই। এটা সংশধন করা যায়?

ভর্তি পরীক্ষায় দুর্নীতি হয়। এটা ঠেকাতে তাই ভর্তি পরীক্ষাই নাকি নেওয়া যাবে না। মাথা ব্যাথার ওষুধ যে মাথাটাই কেটে ফেলা-এটা আসলে আমার জানা ছিল না।
প্রতি বছর এত শিক্ষার্থী জিপিএ পাঁচ পায় যে এখান থেকে কিভাবে যোগ্যরা চান্স পাবে? সবাই চান্স পাবেও না। তাহলে যোগ্যতার মাপকাঠিটা কি? ওদের থেকেই যদি সবাই চান্স না পায়, তার মানে কি বাকীরা অযোগ্য? আর যারা জিপিএ পাঁচ পায় নি, তারা তো হাত টা জোড় করে বলতেই পারে যোগ্যতা প্রমানের একটা সুযোগ আমরাও কি পেতে পারি না?