পৃষ্ঠাসমূহ

শুক্রবার, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১২

রসায়নের পর্যায় সারণী মনে রাখার সহজ কৌশল!!

সালাম ও শুভেচ্ছা জানিয়ে শুরু করছি। আশাকরি সকলে ভালো আছেন। আমিও মহান আল্লাহর রহমতে খুব ভালো আছি। এই ব্লগের অধিকাংশ ব্লগার ও পাঠক ভাই বোনেরা স্টুডেন্ট তাই আজ আমি আপনাদের জন্য এমন একটা পোষ্ট করব যেটা ছাত্র ছাত্রীদের জন্য খুব কাজে লাগবে।

বিশেষ করে বিজ্ঞান বিভাগের। আমরা জানি রসায়ন শাস্ত্রের পর্যায় সারণী মনে রাখা খুবই কঠিন তাই আপনাদের সাথে এমন একটা কৌশল শেয়ার করছি যেটা মুখস্থ করলে পর্যায় সারনী মনে রাখা খুব সহজ হয়ে যাবে। তাই এক্ষুনি মুখস্থ করে ফেলুন।
গ্রুপ 1A: H Li Na K Rb Cs Fr
হায়রে! লি না কে রুবি সাজাবে ফ্রান্সে !
গ্রুপ 2A : Be Mg Ca Sr Ba Ra
বেগুনী, মোগলাই, কাবাব সরিয়ে বাটিতে রাখ ।
গ্রুপ 3A : B Al Ga In Tl
বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ গেলো ইন্ডিয়ার তালে!
গ্রুপ 4A: C Si Ge Sn Pb
চলো, সিলেট গেলে সানগ্লাস পাব ।
গ্রুপ 5A: N P As Sb Bi
নদীতে পানি আসে সব বিকালে ।
গ্রুপ 6A : O S Se Te Po
ও এস এসসি তে পড়ে ।
গ্রুপ 7A : F Cl Br I At
First Class British Indian Architect.
ল্যান্থানাইডঃ Ce Pr Nd Pm Sm Eu Gd Tb Dy Ho Er Tm Yb Lu
ছেলে , প্রীতি এন্ড পমসম । ইউরোপ গুড, তবে ডাইরিয়া হয় । আর টমেটো ইয়লো ব্লু !
অ্যাক্টিনাইডঃ Th Pa U Np Pu Am Cm Bk Cf Es Fm Md No Lr
থাকলে পাশে ইউ এনপি, পুঁথি আমার কমেনা। বিকেলে ক্যাফেতে আইনস্টাইন FM, মুড নষ্টের লহর ।
পর্যায়-১ : H He
Hi! He
পর্যায়-২ : Li Be B C N O F Ne
Lies Because Boron Can Not Oxide Florine and Neon.
পর্যায়-৩ : Na Mg Al Si P S Cl Ar
Nations Might Also Sign Peace Security Clause Argument.
পর্যায়-৪: Sc Ti V Cr Mn Fe Co Ni Cu Zn.
Scachin Tiendulkar Very (good) Cricketer Man (of the match) Feor (the) Country Niot (for) CuZn ((cousin))
পর্যায়-৫: Y Zr Nb Mo Tc Ru Rh Pd Ag Cd
Y and Z – two friends – sing “Namba Teacher R-square” (Our teacher R-square) from “Paddy Again” to a Cd.
সবাইকে অনেক ধন্যবাদ।

বৃহস্পতিবার, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১২

আপনার জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বরের গোপন সংকেত বা মানে জানুন!

বাংলাদেশী হিসাবে আমাদের অনেকের ই জাতীয় পরিচয় পত্র আছে। অনেকে এটাকে ভোটার আইডি কার্ড হিসাবে বলেন যেটা সম্পুর্ণ ভুল। এটা ন্যাশনাল আইডি কার্ড বা জাতীয় পরিচয় পত্র।

আপনারা দেখবেন এটার নীচে লাল কালি দিয়ে লেখা ১৩ সংখ্যার একটা নম্বর আছে যাকে আমরা আইডি নম্বর হিসাবে জানি
কিন্তু এই ১৩ সংখ্যার মানে কি?
1. প্রথম সংখ্যা – জেলা কোড। ৬৪ জেলার আলাদা আলাদা কোড আছে। ঢাকার জন্য এই কোড ২৬
2. পরবর্তী সংখ্যা – এটা আর এম ও (RMO) কোড।
  • সিটি কর্পোরেশনের জন্য –
  • ক্যান্টনমেন্ট –
  • পৌরসভা –
  • পল্লী এলাকা -
  • পৌরসভার বাইরে শহর এলাকা –
  • অন্যান্য –
3. পরবর্তী সংখ্যা – এটা উপজেলা বা থানা কোড
4. পরবর্তী সংখ্যা – এটা ইউনিয়ন (পল্লীর জন্য) বা ওয়ার্ড কোড (পৌরসভা বা সিটি কর্পোরেশনের জন্য)
5. শেষ সংখ্যা – আই ডি কার্ড করার সময় আপনি যে ফর্ম পূরণ করেছিলেন এটা সেই ফর্ম নম্বর।
বর্তমানে আবার ১৭ ডিজিট ওয়ালা আইডি কার্ড দেয়া হচ্ছে যার প্রথম ডিজিট হচ্ছে জন্মসাল!
জানুন এবং সব্বাইকে জানান!
ধন্যবাদ ।

শনিবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০১২

হয়নি ভোলা

(*) চচ্ঞল সেই মুক্ত বিহঙ্গ,
দুরোগ্য ক্যান্সারে ছডিয়েছে সব অঙ্গ,
নড় বড়ে শরীরে পড়ে আছে অ্যাপলো হাসপাতালের সিটে,
ক্ষীন চোখে মোর দিকে চেয়ে হাসে মিট মিটে।

(*) মৃদু ইশারা দিয়ে মোরে পাশে ডাকে,
ফ্যালফ্যালো চোখে চেয়ে থাকে মোর দিকে।
কাঁপাকাঁপা গলায় বলে আমায়,
এই ফ্যানটা বন্ধ করা যায় ?
এর ঘনঘন শব্দটা আমার কাছে কান্নার মত মনে হয়,
চার দেয়ালে এই ছোট রূমে তার প্রতিধ্‌বনি বয়ে যায়।

(*) কতটা পথ না হেটেছি দুইজনে,
ঘুরছি বহু দুর অজানা কোন নির্জনে,
কখনো দর্শক হয়ে আবহানী মাঠে;
কখনো বা জমবেশ আড্ডায় ফিজা হাঠে,
ছুটে চলা সে দিন গুলোতে গুলশান একে,
হাতে হাত রেখে ঘুরে বেড়ানো ধানমন্ডি লেকে।
যার মুখের দিকে চেয়ে মোর কষ্ট হতো শীতল,
সেই মুখের হা্সি আজ কেন এতো বিরল ,

(*) একটু পরে সে গম্ভীর গলায় বলে,
মাঝখানে কত জোছনা গেলো চলে,
আজ এসেছো তুমি সময়ের ক্রান্তি লগ্নে;
আরেকটু পরে আমি হবো গভীর ঘুমে মগ্ন।

(*) আমার শিরা উপশিরায় রক্ত চলাচল থেমে যাচ্ছে,
তোমার  মাথায় হাত রাখতে খুব ইচ্ছে করছে।
স্র্রর্গের সুবাস মোর নাকে আসে,
আমার সমস্ত দেহ তাতে ভাসে।।

(*) চোখের পলকে হারিয়ে গেল সে মোর কাছ থেকে;
আমি চেয়ে থাকি তার নিষ্পাপ চোখের দিকে।
চৌবাচ্চের মধ্যে বৃহত সূ্র্যের প্রতিবিম্বের মত;
মোর হৃদয়ে তার প্রতিচ্ছবি উজ্জ্ব্ল হবে তত।

(*) মোর নয়নের সলিলের অঝর ধারায়;
আজ সে প্রতিচ্ছবি ও উজ্জ্ব্ল হয়ে যায়।
একাকি জোছনা দেখা মোর হৃদয়ে দিচ্ছে দোলা,
আজ যে তোমার জন্মদিন হয়নি ভুলা।


                      লিখেছেন রিংকু রক (Rinku Rock)

                      fb ID : https://www.facebook.com/rinku.rock.90

শুক্রবার, ৭ সেপ্টেম্বর, ২০১২

সকলের জন্য একটি সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি। প্লিজ এখনি সতর্ক হোন।


সাবধান হন এখনি। আপনিও হতে পারেন সিম ক্লোনের শিকার। হাঁ ভয়ানক এই তথ্যটি জানতে পারি একুশে টিভির এক বন্ধুর মাধ্যমে। পরে বিষয়টি সম্পর্কে আরও স্পষ্ট ধারনা পেতে একুশে টি ভির নিউজ দেখে শিওর হলাম মাত্র।
১- সিম ক্লোন কি?
একটি সিম যেটি আপনি ব্যবহার করছেন সেই সিম টি যদি অন্য কেউ ব্যবহার করে কিংবা এক নাম্বার যদি দেখেন এক সাথে দুইজন ব্যবহার করে কিংবা হঠাৎ করে যদি দেখেন আপনার সেল ফোনের কানেকশন নাম্বার থেকে ব্যালান্স কোন কারন ছাড়া কমে যাচ্ছে তবে আপনি সিম ক্লোনের শিকার।

২- কিভাবে শিকার হবেন সিম ক্লোনের?
আপনি যদি অপরিচিত কোন নাম্বার থেকে মিসড কল পান এবং সেটাতে যদি কল ব্যাক করেন তবে আপনি সিম ক্লোনিং এর শিকারে পরিনত হতে পারেন। দুষ্কৃতকারীরা বিশেষ একটি সফটওয়্যার এর মাধ্যমে আপনার নাম্বার টি ক্লোনিং করে। অর্থাৎ আপনি যখন মিসড কল নাম্বারে কল ব্যাক করবেন তখন একটি সফটওয়্যার এর মাধ্যমে আপনার নাম্বার টি ক্লোন হতে পারে। সিম ক্লোনিং হলে আপনার সিমে রাখা ডাটা ক্লোন নাম্বারে চলে যাবে। এবং আপনার প্রাইভেসি ক্ষুণ্ণ হবে।

৩- যে সমস্যায় আপনি পড়তে পারেন সিম ক্লোনিং হয়ে গেলে?
সাধারনত জঙ্গি কিংবা দুষ্কৃতিকারীরা আপনার নাম্বার টি ব্যবহার করে আপনার জীবন বিপন্ন করতে পারে। অর্থাৎ ওই নাম্বার দিয়ে কেউ কাউকে মৃত্যুর হুমকি, চাঁদাবাজি কিংবা জঙ্গি কানেকশন করলে আপাত দায়ভার আপনার উপর বর্তাবে। কাজেই আপনি আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধৃত হবেন। পরবর্তীতে আরও নানাবিধ সমস্যায় পড়তে পারেন।

লক্ষ্য করুন-----------
* ভারতে সম্প্রতি এক লাখ সিম ও রিম কার্ড ক্লোনিং হয়েছে। সেখানকার গোয়েন্দা বাহিনী সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা জানিয়েছে ওই ক্লোনিং সিম বা রিমের মাধ্যমে অনেক অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে।
* বাংলাদেশে এখনও সিম ক্লোনিং হয়েছে বলে ৬ টি মোবাইল অপারেটরের হাতে এমন কোন তথ্য নেই। তবে বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থা জানিয়েছে যে কোন সময় এমন অনাকাংখিত ঘটনা ঘটতে পারে।

সতর্ক হবেন যেভাবে-
* অপরিচিত নাম্বার থেকে মিসড কল এলে আপনি কল ব্যাক করার পূর্বে ভালো করে চিহ্নিত করবার চেষ্টা করুন যে এটি কার নাম্বার। অথবা কল ব্যাক করা বন্ধ করুন।
* মনে রাখবেন সিম ক্লোনিং হতে হলে মিসড কল আসবে। ডাইরেক্ট রিং হলে সেটি রিসিভ করলে আপনি সিম ক্লোনিং এর শিকার হবেন না। মিসড কল এলেই সতর্ক হন।
* যদি দেখেন আপনার সেল ফোনের ব্যালান্স অকারণে কমে যাচ্ছে সাথে সাথে কল সেন্টারে ফোন করে জানান।
* আপনার সেল ফোন টি এখনি বন্ধ করে অন্য একটি নাম্বার থেকে আপনার নাম্বারে ফোন দিন। দেখুন রিং হয় কিনা। রিং হলে আপনি সিম ক্লোনিং এর শিকার।

..................................................................
সকলে সতর্ক হন। অন্যকে বিষয়টি জানান। পারলে কথা গুলো শেয়ার করুন।
ভালো থাকুন। নিরাপদে থাকুন।

বৃহস্পতিবার, ৬ সেপ্টেম্বর, ২০১২

হ্যাক হবে না ফেসবুক অ্যাকাউন্ট!

আপনার ফেসবুকের পাসওয়ার্ড যদি সবাই জেনে যায়, তাহলেও কেউ আপনার অ্যাকাউন্টে প্রবেশ করতে পারবে না। এর জন্য প্রথমে ফেসবুকে লগইন করে ওপরে ডান পাশে Home এর পাশে অ্যারোতে ক্লিক করে Account Settings-এ ক্লিক করুন বা সরাসরি www.facebook.com /settings?ref=mb ঠিকানায় যান। এখন বাঁ পাশ থেকে Security-তে ক্লিক করুন। এখন Login Approvals-এর ডান পাশ থেকে edit-এ ক্লিক করুন। তারপর Require me to enter a security code…বক্সে টিকচিহ্ন দিন। টিকচিহ্ন দেওয়ার সময় নতুন একটি বার্তা এলে Set Up Now-এ ক্লিক করুন। এখন Phone number বক্সে আপনার মোবাইল নম্বর লিখে Continue তে ক্লিক করুন। আপনার মোবাইলে একটি কোড নম্বর আসবে। কোড নম্বরটি কোড বক্সে লিখে Submit Code বাটনে ক্লিক করে Close-এ ক্লিক করুন। (Login Notifications-এর ডান পাশ থেকে edit-এ ক্লিক করে Email এবং Text message বক্সেও টিকচিহ্ন দিয়ে Save-এ ক্লিক করে রাখতে পারেন।) এখন ফেসবুক অ্যাকাউন্ট লগআউট করে পুনরায় আবার ফেসবুকে লগইন করুন।
দেখবেন Name New Device নামে একটি পেজ এসেছে। সেখানে Device name বক্সে কোনো নাম লিখে Save Device-এ ক্লিক করুন। এখন থেকে প্রতিবার আপনার কম্পিউটার ছাড়া অন্য কারও কম্পিউটার থেকে আপনার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে লগইন করতে চাইলে আপনার মোবাইলে একটি কোড নম্বর আসবে এবং সেই কোড নম্বরটি কোড বক্সে লিখে Continue তে ক্লিক করলেই আপনার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে প্রবেশ করা যাবে। কাজেই আপনার ফেসবুকের পাসওয়ার্ড সবাই জানলেও কেউ আপনার ফেসবুকে লগইন করতে পারবে না।

সোমবার, ১৩ আগস্ট, ২০১২

জিপিএ এর ভিত্তিতে মেডিকেলে ভর্তি :: কিন্তু মাননীয় মন্ত্রী মহোদয় কি ব্যাপারগুলো ভেবে দেখেছেন??

মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষার ঠিক দু’মাস আগে চট করে আজকে মাননীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী ঘোষণা করলেন পরীক্ষা বাতিল, ভর্তি নেয়া হবে জিপিএর ভিত্তিতে। এর কারন হিসেবে পত্রিকায় যেটা এসেছে তা হল
> কোচিং-বাণিজ্য বন্ধ করতে।
>প্রতিবছর ভর্তির জন্য ৫০-৬০ হাজার ছাত্রছাত্রীর পরীক্ষা নেওয়ার সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসা দরকার।
>গত বছর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ছাপাখানা থেকে প্রশ্নপত্র ফাঁসের চেষ্টা, পরীক্ষার আগে ভুয়া প্রশ্নপত্র বেচাকেনাসহ নানা ধরনের সমস্যা ।
সূত্র: ১. প্রথম আলো ২.bdnews24.com


এ বিষয়ে যে ব্যাপারগুলো ভাবা উচিত তার একটা লিস্ট দিচ্ছি, জানি না সেটা স্বাস্থ্যঅধিদপ্তরের চোখে পড়বে কিনা

১.
ধরা যাক, এবছর সেটা বাস্তবায়ন হল, তাহলে ব্যাপার কি দাঁড়াবে। এতদিন ধরে হাজার হাজার স্টুডেন্ট মেডিকেলের জন্য যারা প্রিপারেশন নিচ্ছিল তাদের মধ্যে এসএসসি এবং এইচএসসি তে গোল্ডেন এ+ ছাড়া বাকী সবাই আক্ষরিক অর্থেই পানিতে পড়বে। কারন মেডিকেলে সবমিলিয়ে আসন প্রায় তিনহাজারের কিছু বেশি। আর আমাদের গত কয়েক বছরের জিপিএ ৫ এর সংখ্যাটা এক ঝলক দেখুন-

এসএসসিঃ
২০১০ সালে জিপিএ ৫ পেয়েছে = ৬২ হাজার ১৩৪ জন।
২০১১ সালে জিপিএ ৫ পেয়েছে = ৭৬ হাজার ৭৪৯ জন
২০১২ সালে জিপিএ ৫ পেয়েছে = ৮২ হাজার ২১২ জন।

এইচএসসিঃ
২০১০ সালে জিপিএ ৫ পেয়েছে = ২৮ হাজার ৬৭১ জন।
২০১১ সালে জিপিএ ৫ পেয়েছে = ৩৯ হাজার ৭৬৯ জন
২০১২ সালে জিপিএ ৫ পেয়েছে = ৬১ হাজার ১৬২ জন


তারমানে জিপিএ ৫ এর নীচে যারা তারা তো হিসাবের বাইরেই, এমনকি যে ছেলেমেয়েগুলো দুবারই গোল্ডেন এ+ পায় নি, তাদের সবারই এতদিনকার স্বপ্ন এবং পরিশ্রম ব্যর্থ হয়ে গেল। এবং যারা মেডিকেলে চান্স পেত নিজ পাঠ্যপুস্তকে দখল এবং মারাত্মক পরিশ্রমের মাধ্যমে তাদের অধিকাংশই কোন জায়গাতেই চান্স পাবে না। কারন মেডিকেলের ভর্তির প্রিপারেশন ভাল মত যারা নেয় তারা অন্য কোন পাবলিক ইউনিভার্সিটিতে প্যাটার্ন ভিন্ন হওয়ার কারনে চান্স পাবে না। এই বিশাল পরিমান ছাত্রছাত্রীদের পরিশ্রমের মূল্য কী রইলো? মাঝামাঝি সময়ে এসে তাদের জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান সিদ্ধান্তকে মূল্যহীন করে দেয়া কতটুকু যৌক্তিক?

২.

কোচিং বাণিজ্য বন্ধই যদি এ সিদ্ধান্তের উদ্দেশ্য হয় তাহলে ব্যাপারটা কেমন সিদ্ধান্ত হয় সেটা ভাববার বিষয়। কোচিং বাণিজ্য বলতে হয়তো দুটো ব্যাপারকে বোঝানো হচ্ছে, এক কোচিং এ পাঠ্য বইগুলো পড়ানোর বিনিময়ে মোটা টাকা নেয়। আর দ্বিতীয় হচ্ছে কোন কোন কোচিং এর নামে অভিযোগ আছে তারা প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় জড়িত।
এখন প্রথমটাতে যদি নীতিনির্ধারকদের আপত্তি থাকে, অর্থাৎ কোচিং বেশি বেশি টাকা নিচ্ছে তাহলে সমস্ত কোচিং গুলোর জন্য নীতিমালা প্রণয়ন করে কিংবা কোচিংগুলোর রেজিস্ট্রেশন বাতিল করা যেতে পারে।
কিন্তু এটা বন্ধ করতে পরীক্ষা বাতিল করাটা হল ঠিক মাথা ব্যথার জন্য মাথা কাটার মত। কোচিং তোমার থেকে টাকা নিচ্ছে, ওকে তোমার পরীক্ষা দেয়া বন্ধ, মেডিকেলে পড়ার আশা কোর না, তাহলে কোচিংগুলোও তোমাকে ঠকাতে পারবে না। প্রবলেম সলভড!:|
আর এবছর কোচিং গুলো যা টাকা নেবার তা নিয়ে নিয়েছে, সুতারাং এ বছর যারা কোচিংয়ের পিছনে তাদের টাকা ব্যয় করে ফেলেছে তাদের সুবিধাটা কি হবে? এখানে অনেকেই আছে নিম্নবিত্ত ঘরের সন্তান, টিভিতে দেখলাম একজন পিতা তার সন্তানকে মেডিকেল কোচিং এ ভর্তি করিয়েছেন তার গরু বেচে। এই ছেলেগুলোর মত স্টুডেন্টরা অন্যবিষয়ে প্রিপারেশন নেয়ার জন্য অর্থনৈতিক সহায়তা কীভাবে পাবে, তাদের এতদিনকার অর্থনৈতিক ক্ষতি আর শ্রমের মূল্য কে দেবে?
দ্বিতীয়ত, প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনা কোচিংয়ের মাধ্যমে ঘটতে পারে, তাই পরীক্ষা বাতিল। প্রশ্নফাঁস হবার মত ঘটনা এক ধরনের প্রশাসনিক দুর্বলতা, প্রশ্ন কোচিং সেন্টার তৈরি করে না। তারমানে সেটা যখন ফাঁস হয় সেটা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিজস্ব সিস্টেমের ব্যর্থতা। সেটার দায়ভার এড়াতে যদি পরীক্ষা বাতিল করা হয় তাহলে ব্যাপারটা আর কোচিংকেন্দ্রিক থাকে না। ঘরে আসবাবপত্র চুরি হতে পারে সেইভয়ে বাড়ির নিরাপত্তা ব্যবস্থা উন্নত না করে আসবাবপত্র কিছু না কিনে খালি ঘরে বাস করার মত- ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়।
কেন এ দায়ভার ছাত্রছাত্রীরা বহন করবে?

৩.
জিপিএ আমাদের দেশে একটি মূল্যবান মাপকাঠি সন্দেহ নেই। কিন্তু সেটাই কী ১০০ ভাগ নির্ভেজাল?আমরা সাধারণ যে কেউ জানি সেটা নয়। কারন প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে দারুন মেধাবী ছাত্রছাত্রীরা ভাল জিপিএ পায় না, আবার ভাল ভাল স্কুল গুলোতে গড়পড়তা সবাই ভাল জিপিএ পেয়ে যায়। প্রত্যন্ত অঞ্চলের এসব মেধাবী ও পরিশ্রমী ছেলেমেয়ে গুলোর অনেকেই এতদিন পর্যন্ত মেডিকেলে পড়ার সুযোগ পেয়েছে। জিপিএর ভিত্তিতে ভর্তি চালু করলে এসব অদম্য মেধাবীদের কি দমিয়ে রাখা হবে না?

৪.
ইংলিশ মিডিয়ামের থেকে প্রতিবছর অনেক ছেলেমেয়ে মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে ভর্তি হচ্ছে, তাদের সিস্টেমের সাথে প্রচলিত আমাদের জিপিএর কোন মিলই নেই বলা চলে। তাদের ক্ষেত্রে তারমানে নতুন কোন ধরনের মাপকাঠি নির্ধারণ করা হবে। কিন্তু সেটা কতটুকু সার্থক পদ্ধতি হবে ? এ পদ্ধতি প্রণয়ন দীর্ঘদিনের অ্যানালাইসিস ছাড়া চট করে কীভাবে করা সম্ভব?

৫.

অনেকেই আছে যারা গত বছরে চান্স না পাওয়াতে এবার আবার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। তারা তাদের শিক্ষাজীবনের দীর্ঘ একটা সময় একটা লক্ষ্যে পৌঁছবার জন্য পরিশ্রম করে যাচ্ছিল। চট করে এমন একটা সিদ্ধান্তে তাদের
এতদিনকার স্বপ্ন এবং শ্রম কীভাবে ভেঙে পড়বে চিন্তা করে দেখুন। আগে থেকে জানলে হয়তো তারা অন্যকোন বিষয়ে পড়বার জন্য সে শ্রমটা দিত। এ ধরনের ছাত্রছাত্রীদের সমস্ত শ্রম, স্বপ্ন এ সিদ্ধান্তে কি ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে না?

৬.
মেডিকেল কোচিং বন্ধ হলেই কি কোচিং ব্যবসা আদৌ বন্ধ হচ্ছে। ভর্তি পরীক্ষার কোচিং বন্ধ হলে এইচএসসি, এসএসসি তে চলমান স্যারদের প্রাইভেট বাণিজ্য এবং কোচিংগুলো অনেক বেশি আগ্রাসী হয়ে পড়বে। স্যারদের হাতে প্রাকটিকালের নাম্বার থাকে, সে সব ক্ষেত্রে প্রাইভেট পড়ানো স্যারদের দৌড়াত্ম বাড়বে ভীষণরকম। কলেজে কলেজ সংঘর্ষ থাকে, নির্দিষ্ট কলেজের ছাত্ররা এমন সংঘর্ষযুক্ত কলেজের টিচারদের হাতে বলি হবে প্র্যাকটিকালের নাম্বারের কারনে। এখনকার মেডিকেল কোচিংগুলোই দেখা যাবে এসএসসি আর এইচএসসি কোচিং এ পরিণত হয়ে গেছে। যেই লাউ সেই কদুই হবে ঘুরে ফিরে, বরঞ্চ স্কুল কলেজে ছাত্র-ছাত্রীরা অনেক বেশি ভোগান্তির সম্মুখিন হবে। তাহলে কোচিং ব্যবসা বন্ধের ধুঁয়া তুলে কী লাভ হবে?

৭. আমরা কিছুদিন আগেও দেখেছি কলেজ ভর্তির ক্ষেত্রে বয়সের মানদন্ড নামক ব্যাপার চালু হয়েছিল, যা এক বছর পরই হাস্যকর হিসেবে প্রমাণিত হয়। ক্ষতি যাদের হওয়ার হয়েই গেল। অনেক ভাল ভাল ছেলেমেয়ে ভাল কলেজে পড়ার চান্স পেল না। মেডিকেল ভর্তির নতুন পদ্ধতিও যে এরকম বর্জনীয় হবে না সেটার পর্যাপ্ত অ্যানালাইসিস না করে কীভাবে চট করে সেটা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। কলেজ না হয় কারো ক্যারিয়ারকে পুরো ধ্বংস করতে পারে না। কিন্তু আন্ডারগ্রাজুয়েট পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের এভাবে গিনিপিগ বানানোর ক্ষেত্রে আরো সতর্কভাবে কি এগুনো উচিৎ নয়?

৮. প্রতি বছর ৫০-৬০ হাজার পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষা নেয়ার সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে ৬০-৭০ হাজার জিপিএ থেকে মেডিকেলের জন্য শিক্ষার্থী বাছাই করাটা কতটুকু সুবিধাজনক?


                                                                                                                    *  লিখেছেন মাসুদুল হক


আমরা কি একটা সুযোগও পেতে পারি না?

অভি (ছদ্মনাম) এবার উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়ে মেডিকেল ভর্তি কোচিং করছে। স্বপ্ন একটি সরকারী মেডিকেলে চান্স পাবে। কোচিং এর শুরুর দিন থেকে দিন রাত পড়াশোনা। রুম থেকে যেন বেরই হয় না। কোচিং, খাওয়া আর পড়া। ওর বাবা দিন মজুর। তবুও অনেক কষ্টে টাকা জোগাড় করে ছেলেকে কোচিং করতে পাঠিয়েছে। অভিকে একদিন জিজ্ঞেস করলাম, তোমার পড়াশোনার কি খবর? বলল, ভাইয়া, আমার তো এসএসসি এবং এইচএসসি এর জিপিএ আট দশমিক পাঁচ। তাই খুব ভালো করে পড়ছি। যেন ভর্তি পরীক্ষায় ভালো করতে পারি। বললাম, তুমি কি ভর্তি পরীক্ষায় এই গ্যাপ কভার করতে পারবে? বলল, এর আগে এমন অনেক নজির আছে যারা শুধু মাত্র ন্যুনতম আবেদন করার যোগ্যতা ছিল মাত্র, তারপরেও এই কয়টা দিনের পড়াশোনায় মেডিকেলে চান্স পেয়ে গেছে। আমি পাব না কেন? ওর আত্মবিশ্বাস দেখে আমিও আশায় বুক বাধলাম। ঠিকই তো ভর্তি পরীক্ষায় ভালো করলে তো চান্স পাওয়া আসলেই সম্ভব।

মীম (ছদ্মনাম) গত বছর মেডিকেল কোচিং করেও চান্স পায় নি। তারপরও অবশ্য অন্য কোন জায়গায় ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেয় নি। কারণ, ওর জীবনের একটা মাত্র লক্ষ্য, ও ডাক্তার হবে। লক্ষে স্থির থাকতে ও এবার আবার কোচিং করছে। অবশ্য ওর এসএসসি এবং এইচএসসি পরীক্ষার জিপিএ ভালো ছিল না। কিন্তু আত্মবিশ্বাস এটাই ও দুটি বছর অনেক পড়েছে। অনেক ভালো প্রস্তুতি ওর। বই এর কোথায় কি আছে ও বলে দিতে পারে। এখন শুধু ওই দিনটার জন্য অপেক্ষা যেদিন পরীক্ষার প্রশ্ন পেয়েই বলতে পারে, আমি পেরেছি। আমার সুযোগ আমি কাজে লাগাতে পেরেছি।

উপরের দুইটা ঘটনাই বর্তমান সময়ের খুব স্বাভাবিক ব্যাপার। ভর্তি কোচিং করতে আসা হাজার শিক্ষার্থীদের স্বপ্ন তাদের কষ্টটা যেন বৃথা না যায়। হয়ত ভাগ্য দোষে অথবা নিজেদের উদাসীনতায় যারা এসএসসি অথবা এইচএসসি পরক্ষায় ভালো করতে পারে নি, তাদের অনেকেরই ভর্তি পরিক্ষার আগে হুশ ফেরে। কঠোর পরিশ্রমে অনেকেই ছিনিয়ে আনে সাফল্যের মুকুটটি। মেডিকেল ভর্তি পরিক্ষার বিগত বছর গুলোর ফলাফল বিশ্লেষণ করলে খুব ভালো করেই দেখা যায় যে যারা চান্স পেয়েছে তাদের যে সবারই এসএসসি এবং এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ পাঁচ ছিল তা নয়। অধিকাংশই চান্স পায় যাদের জিপিএ কম ছিল অথচ ভালো করে পরবর্তিতে পড়াশোনা করেছে। শুধু মাত্র জিপিএ ভালো বলে অনেক ছেলে মেয়ে আছে এই গর্বেই পড়াশোনা করে না। তাই ভালো কোথাও চান্সও পায় না। ভর্তি পরীক্ষায় এই কথাটা খুব বেশি প্রচলিত যারা এইচএসসি এর পরের কয়টা মাস মন দিয়ে পড়বে, সময়টা কাজে লাগাবে তারা চান্স পাবে। হয় ও তাই। অনেক তথা কথিত ভালো ছাত্র বা ছাত্রি আছে যারা সময়তা কাজে না লাগানর কারনে ঝরে যায় অথবা আশানুরুপ জায়গায় চান্স পায় না। এরকম হাজার নজির আছে।

আমি বুঝলাম না। কি বুঝে কর্তৃপক্ষ এই আত্মঘাতি সিদ্ধান্ত নিলেন? উপরে উল্লেখিত এই কমল মতি দুই জনছাত্র ছাত্রীর মত হাজার শিক্ষার্থী কি অপরাধ করেছিল? এত কষ্ট করে স্বপ্ন বাঁচাতে রাতের পর রাত ঘুম বাদ দিয়ে যারা আগের ভুল সংশোধন করে নতুন করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে সচেষ্ট, তাদের দশটা কোথায়? নাকি সরকার মনে করছে যে ভুল তো ভুলই। এটা সংশধন করা যায়?

ভর্তি পরীক্ষায় দুর্নীতি হয়। এটা ঠেকাতে তাই ভর্তি পরীক্ষাই নাকি নেওয়া যাবে না। মাথা ব্যাথার ওষুধ যে মাথাটাই কেটে ফেলা-এটা আসলে আমার জানা ছিল না।
প্রতি বছর এত শিক্ষার্থী জিপিএ পাঁচ পায় যে এখান থেকে কিভাবে যোগ্যরা চান্স পাবে? সবাই চান্স পাবেও না। তাহলে যোগ্যতার মাপকাঠিটা কি? ওদের থেকেই যদি সবাই চান্স না পায়, তার মানে কি বাকীরা অযোগ্য? আর যারা জিপিএ পাঁচ পায় নি, তারা তো হাত টা জোড় করে বলতেই পারে যোগ্যতা প্রমানের একটা সুযোগ আমরাও কি পেতে পারি না?

শুক্রবার, ২০ জুলাই, ২০১২

কিংবদন্তি লেখক হুমায়ূন আহমেদ আর নেই



জনপ্রিয় লেখক হুমায়ূন আহমেদ আর নেই। বাংলাদেশ সময় গত বৃহস্পতিবার রাত সোয়া ১১ টার দিকে তিনি ইন্তেকাল করেন (ইন্না লিল্লাহি....রাজেউন।) ক্যান্সার নিয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রের একটি হাসপাতালে মৃত্যু হয়েছে তার।

জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ড. এম এ মোমেন বৃহস্পতিবার রাতে নিউ ইয়র্কের ম্যানহাটনের বেলভ্যু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন হুমায়ুন আহমেদের মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করেন। বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ১১টার দিকে তিনি বলেন, “একটু আগেই তাকে মৃত ঘোষণা করেছেন চিকিৎসকরা।”

বাংলা সাহিত্যের জনপ্রিয় এই লেখকের বয়স হয়েছিল ৬৪ বছর।

বৃহদান্ত্রে ক্যান্সার ধরা পড়ার পর গত বছরের সেপ্টেম্বরে চিকিৎসার জন্য নিউ ইয়র্কে যান হুমায়ূন আহমেদ। সেখানে মেমোরিয়াল স্লোয়ান-কেটরিং ক্যান্সার সেন্টারে চিকিৎসা নিতে শুরু করেন তিনি।

এরপর দুই পর্বে মোট ১২টি কেমো থেরাপি নেওয়ার পর গত মাসে বেলভ্যু হাসপাতালের অনকোলজি বিভাগের প্রধান ডা. জেইন এবং ক্যান্সার সার্জন জজ মিলারের নেতৃত্বে হুমায়ূন আহমেদের দেহে অস্ত্রোপচার হয়।


হুমায়ূন আহমেদ: কুতুবপুর থেকে নিউইয়র্ক
১৯৪৮ সালের ১৩ নভেম্বর। এক শীতের রাতে নেত্রকোনা জেলার মোহনগঞ্জের কুতুবপুর গ্রামে হুমায়ূন আহমেদের জন্ম। ডাক নাম কাজল। বাবা ফয়জুর রহমান আহমেদ ও মা আয়েশা ফয়েজের প্রথম সন্তান তিনি।

বাবা ফয়জুর রহমান আহমেদ ছিলেন পুলিশ কর্মকর্তা, আর মা ছিলেন গৃহিনী। তিন ভাই দুই বোনের মাঝে তিনি সবার বড়। খ্যাতিমান কম্পিউটার বিজ্ঞানী, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক জাফর ইকবাল তাঁর ছোটভাই। সবার ছোট ভাই আহসান হাবীব নামকরা কার্টুনিস্ট ও রম্য লেখক।

বাবা ফয়জুর রহমানের ধারণা ছিল তাঁর প্রথম সন্তান হবে মেয়ে। তিনি মেয়ের নামও ঠিক করে রেখেছিলেন। তাঁর অনাগত কন্যা সন্তানটির জন্য তিনি একগাদা মেয়েদের ফ্রকও বানিয়ে রেখেছিলেন।

বানিয়ে রেখেছিলেন রূপার মল। মেয়ে মল পায়ে দিয়ে ঝুম ঝুম করে হাঁটবে- তিনি মুগ্ধ হয়ে দেখবেন। কিন্তু প্রথম সন্তান হলো ছেলে। তাতে কি? তাঁর এই পুত্র সন্তানটিকে তিনি দীর্ঘদিন মেয়েদের সাজে সাজিয়ে রেখেছিলেন। এমন কি তাঁর মাথার চুলও ছিল মেয়েদের মতো লম্বা। লম্বা চুলে মা বেণি করে দিতেন। বেণি করা চুলে রংবেরংয়ের ফিতা পরে হুমায়ূন আহমেদের শৈশবের শুরু।

হুমায়ূন আহমেদের শৈশবের প্রথম অধ্যায়টি যতটা স্নেহ ও মমতায় কেটেছে, দ্বিতীয় অধ্যায়টি কেটেছে ততটা বঞ্চনার ভেতর দিয়ে। শৈশবে তাঁর মা টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত হন। জ্বর থেকে সুস্থ হওয়ার পর তাঁর স্মৃতিভ্রম দেখা দেয়। তিনি কাউকেই চিনতে পারছেন না, এমন কি তাঁর ছেলেকেও না। ফলে হুমায়ূন আহমেদকে পাঠিয়ে দেয়া হয় নানার বাড়ি মোহনগঞ্জে। সেখানে দুবছর তিনি নানা-নানির আদরে বেড়ে উঠেন।

দুবছর পর মা সুস্থ হয়ে ওঠেন। এরপর ১০ বছর বয়স পর্যন্ত হুমায়ূন আহমেদের শৈশব কেটেছে হেসেখেলে। বাবার চাকরি সূত্রে বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ঘুরে তাঁর শৈশব কেটেছে।

সিলেট থেকে বাবা বদলী হন দিনাজপুরের জগদ্দলে। সেখানে জঙ্গলের ভেতর এক জমিদার বাড়িতে তাঁরা থাকতেন। জগদ্দলের দিনগুলি তাঁর কাছে ছিল হিরন্ময়। বাবার সাথে জঙ্গলে ভ্রমণ করতেন। গুলিভর্তি রাইফেল হাতে বাবা তাঁর ছেলেমেয়েদের নিয়ে জঙ্গলে ঢুকতেন। ঘন পাতার ফাঁক দিয়ে অল্প অল্প আলো আসত। থমথমে জঙ্গল। বিচিত্র সব পাখি ডাকত। বুনো ফুলের গন্ধ। পরিষ্কার বনে চলার পথ। বিচিত্র বন্য ফল। জঙ্গল পেরোলেই নদী। চকচকে বালির উপর দিয়ে স্বচ্ছ পানি বয়ে যেত। দুপুরে সেই নদীতে গোসল করতেন। একবারেই আলাদা এক জীবন।

জগদ্দল থেকে আবার বদলি পঞ্চগড়ে। সেখানে ভোরবেলা বাসার সামনে দাঁড়ালে কাঞ্চনজঙ্ঘার তুষার শুভ্র চূড়া চোখের সামনে ঝলমল করে উঠত। পঞ্চগড় থেকে এবার রাঙামাটি। পাহাড়ি উপত্যকায় আবার সেই উদ্দাম ঘুরে বেড়ানোর দিন। হুমায়ূন আহমেদের শৈশব কেটেছে এমনি স্বপ্নময়তার ভেতর দিয়ে।

শৈশবে হুমায়ূন আহমেদ যত জায়গায় গিয়েছেন তার মাঝে তাঁর সবচেয়ে প্রিয় ছিলো দিনাজপুরের জগদ্দল। তার প্রধান কারণ ছিল তাঁরা যেখানে থাকতেন তার আশেপাশে কোনো স্কুল ছিল না। স্কুলের কথা মনে হলেই হুমায়ূন আহমেদের মুখ এমন তেতো হয়ে যেত। বাবা মা তাঁকে স্কুলে পাঠাতেন বটে, তবে স্কুলে সময় কাটাতেন কেবল দুষ্টুমি করে। টেনেটুনে পাশ করতেন।

প্রাইমারি স্কুল পাশের পর এই হুমায়ূন বদলে যান। ষষ্ট শ্রেণীতে ওঠার পর থেকে স্কুলের প্রতি তাঁর আগ্রহ বাড়তে থাকে। আগ্রহটা এমনি ছিল যে এসএসসি পরীক্ষার ফল বের হওয়ার পর দেখা গেল, তিনি সম্মিলিত মেধা তালিকায় দ্বিতীয় স্থান লাভ করেছেন। ১৯৬৫ সালে বগুড়া জিলা স্কুল থেকে তিনি এসএসসি পাস করেন। ঢাকা কলেজ থেকে ১৯৬৭ সালে তিনি এইচএসসি পাস করেন। এইচএসসি পরীক্ষাতেও তিনি মেধা তালিকায় স্থান করে নিয়েছিলেন। এরপর ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগে। ১৯৭২ সালে রসায়ন বিভাগ থেকে কৃতিত্বের সাথে স্নাতকোত্তর পাশ করে তিনি একই বিভাগের প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। পরবর্তীতে ১৯৮২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ডাকোটা স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে অধ্যাপক যোসেফ এডওয়ার্ড গ্লাসের তত্ত্বাবধানে পলিমার কেমিস্ট্রিতে পিএইচডি ডিগ্রি নেন। লেখালেখি ও চলচ্চিত্রে নিয়মিত সময় দেবার জন্য পরবর্তীতে অধ্যাপনা পেশা ছেড়ে দেন জনপ্রিয় শিক্ষক হুমায়ূন আহমেদ।

গত কয়েক দশক ধরেই বাংলাদেশের লেখালেখির ভুবনে হুমায়ূন আহমেদের জনপ্রিয়তা আকাশচুম্বী। ১৯৭২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবস্থায় ‘নন্দিত নরকে’ উপন্যাস দিয়ে সাহিত্যাঙ্গনে তাঁর আত্মপ্রকাশ। ‘নন্দিত নরকে’ যখন প্রকাশ হয় তখনই বোঝা গিয়েছিলো কথা সাহিত্যের কঠিন ভুবনে তিনি হারিয়ে যেতে আসেননি। তাঁর এই অমিত সম্ভাবনা তখনই টের পেয়ে প্রখ্যাত লেখক-সমালোচক আহমদ শরীফ এক গদ্যের মাধ্যমে হুমায়ূন আহমেদকে অভিনন্দিত করেছিলেন। আহমদ শরীফের প্রশংসা যে অপাত্রে ছিল না তা তো আজ সর্বজন বিদিত।

মধ্যবিত্ত জীবনের কথকতা সহজ সরল গদ্যে তুলে ধরে তিনি তাঁর পাঠককে মন্ত্রমুগ্ধ করে রেখেছেন। শুধু মধ্যবিত্ত জীবনের কথকতা বয়ানেই সীমিত নয় তাঁর কৃতিত্ব, বেশ কিছু সার্থক সায়েন্স ফিকশন-এর লেখকও তিনি। জনপ্রিয় চরিত্র মিসির আলী ও হিমুর স্রষ্টা তিনি।

হুমায়ূন আহমেদের সাহিত্যের ভিতটা গড়ে ওঠে পারিবারিক বলয় থেকেই। তাঁর বাবা ছিলেন সাহিত্যের অনুরাগী। বাসায় নিয়মিত সাহিত্য আসর বসাতেন। সেই আসরের নাম ছিলো সাহিত্য বাসর। গল্প লেখার অভ্যাসও ছিল তাঁর। যদিও সেসব গল্প কোথাও ছাপা হয়নি। তবে গ্রন্থাকারে তা প্রকাশিত হয়েছিল। সন্তানদের মধ্যে যাতে সাহিত্য বোধ জেগে ওঠে, সে চেষ্টা করেছেন তাঁর বাবা। মাঝে মাঝে তিনি নির্দিষ্ট একটা বিষয় দিয়ে ছেলেমেয়েদের কবিতা লিখতে বলতেন, ঘোষণা করতেন যার কবিতা সবচেয়ে ভাল হবে তাকে দেওয়া হবে পুরস্কার।
হুমায়ূন আহমেদের বড় মামা শেখ ফজলুল করিম যিনি তাঁদের সাথেই থাকতেন এবং যিনি ছিলেন তাঁদের সার্বক্ষণিক সঙ্গী, তিনি কবিতা লিখতেন, লিখতেন নাটক এবং সেই নাটক তিনি তাঁর ভাগ্নে-ভাগ্নিদের দিয়ে বাসায় গোপনে গোপনে মঞ্চস্থও করাতেন। আর হুমায়ূন আহমেদের নিজের ছিল গল্প, উপন্যাসের প্রতি অসাধারণ টান।

হুমায়ূন আহমেদের পড়া প্রথম সাহিত্য ‘ক্ষীরের পুতুল’। যদিও তাঁর বাবার বিশাল লাইব্রেরি ছিলো। কিন্তু সমস্ত বই তিনি তালাবদ্ধ করে রাখতেন। তিনি হয়ত ভেবেছিলেন তাঁর সন্তানদের এসব বই পড়ার সময় এখনো হয়নি। কিন্তু ‘ক্ষীরের পুতুল’ পড়ার পর তিনি তাঁর বাবার বইয়ের আলমারী থেকে বই চুরি করে লুকিয়ে পড়তে শুরু করলেন এবং একদিন বাবার হাতে ধরা পড়ে গেলেন। বাবা তাঁকে নিয়ে গেলেন সিলেট কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদে। বইয়ের এক বিশাল সংগ্রহ সেখানে। যেদিকে চোখ যায় শুধু বই আর বই। বাবা তাঁকে লাইব্রেরির সদস্য করে দিলেন। সম্ভবত তিনিই ছিলেন এই লাইব্রেরির সর্ব কনিষ্ঠ সদস্য। এভাবেই সাহিত্যের প্রতি হুমায়ূন আহমদের জন্ম নেয় গভীর ভালোবাসা।

যদিও হুমায়ূন আহমদের প্রথম রচনা ‘নন্দিত নরকে, তবে তারও বহু পূর্বে দিনাজপুরের জগদ্দলে থাকা অবস্থায় একটি কুকুরকে নিয়ে তিনি ‘বেঙ্গল টাইগার’ নামে একটি সাহিত্য রচনা করেছিলেন। ১৯৭২ সালে রচনা করেন ‘নন্দিত নরকে’। তারপর একে একে ‘শঙ্খনীল কারাগার’, ‘রজনী’, ‘গৌরিপুর জংশন’, ‘অয়োময়ো’, ‘দূরে কোথাও’, ‘ফেরা’, ‘কোথাও কেউ নেই’, ‘আমার আছে জল’, ‘অচিনপুর’, ‘এইসব দিনরাত্রি’সহ দুই শতাধিক উপন্যাসের স্রষ্টা হূমায়ূন আহমেদ।

কেবল অধ্যাপনা আর কথাসাহিত্যই নয়, চলচ্চিত্র নির্মাণেও হূমায়ূন আহমেদ ছিলেন এক সুদক্ষ কারিগর। তাঁর নির্মিত প্রথম চলচ্চিত্র ‘আগুনের পরশমনি’। মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক এই চলচ্চিত্রটি শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র হিসেবে আটটি শাখায় জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জিতে নিয়েছিল। তাঁর মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক আরেকটি চলচ্চিত্র ‘শ্যামল ছায়া’ বিদেশী ভাষার ছবি ক্যাটাগরিতে অস্কার পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছিল। তাঁর অন্য কীর্তি ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’, ‘দুই দুয়ারী’, ‘চন্দ্রকথা’ প্রভৃতি চলচ্চিত্র। এ চলচ্চিত্রগুলো কেবল প্রশংসাই কুড়ায়নি, মধ্যবিত্ত দর্শকদেরও হলমুখী করেছে।

টিভি নাট্যকার হিসেবেও হূমায়ূন আহমেদ ছিলেন সমান জনপ্রিয়। আশির দশকের মাঝামাঝি তাঁর প্রথম টিভি নাটক ‘এইসব দিনরাত্রি’ তাঁকে এনে দিয়েছিল তুমুল জনপ্রিয়তা। তাঁর হাসির নাটক ‘বহুব্রীহি’ এবং ঐতিহাসিক নাটক ‘অয়োময়’ বাংলা টিভি নাটকের ইতিহাসে অনন্য সংযোজন। নাগরিক ধারাবাহিক ‘কোথাও কেউ নেই’ এর চরিত্র বাকের ভাই বাস্তব হয়ে ধরা দিয়েছিল টিভি দর্শকদের কাছে। নাটকের শেষে বাকের ভাইয়ের ফাঁসির রায় হলে ঢাকার রাজপথে বাকের ভাইয়ের মুক্তির দাবিতে মিছিল পর্যন্ত হয়েছিল। বাংলা নাটকের ইতিহাসে এমনটি আর কখনো হয়নি। এছাড়াও অসংখ্য বিটিভি ও প্যাকেজ নাটকের নির্মাতা তিনি। নাট্যকার- নির্দেশক দুই ভূমিকায়ই সমান সফল ছিলন হূমায়ূন আহমেদ। সফল শিল্পের আরেকটি শাখা চিত্রকলাতেও। তাঁর চিত্রশিল্পের স্বাক্ষর নিজ বাড়ির দেয়ালে টাঙানো রয়েছে।

১৯৭৩ সালে গুলতেকিনের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন হুমায়ূন আহমেদ । হুমায়ূন এবং গুলতেকিন দম্পতির চার ছেলে-মেয়ে। দীর্ঘ ৩২ বছরের দাম্পত্য জীবনের অবসান ঘটিয়ে ২০০৫ সালে ডিভোর্সের মাধ্যমে তাঁরা পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ে যান। এরপর তিনি অভিনেত্রী ও পরিচালক মেহের আফরোজ শাওনকে বিয়ে করেন। শাওন ১৯৯০ সাল থেকে টিভিতে অভিনয় শুরু করেন। পরবর্তীতে চলচ্চিত্রের সঙ্গেও যুক্ত হন।

বালক হুমায়ূন আহমেদ ভালোবাসতেন গাছপালা শোভিত সবুজ অরণ্যানীর ভেতর ঘুরে বেড়াতে, বিটোফেনের সুরের মতন টিনের চালে বৃষ্টির শব্দ শুনতে। এই বয়সে ও তাঁর সবুজের ভেতর হারিয়ে যেতে ইচ্ছে হত, ইচ্ছে হত বৃষ্টির শব্দের ভেতর নিজেকে লুকিয়ে ফেলতে। ইট কাঠের খাঁচায় বন্দী এই রাজধানী ঢাকা তাঁর দম বন্ধ হয়ে আসত। তাই তিনি গাজীপুরের শালবনের ভেতর তৈরি করেছেন এক বিশাল নন্দন কানন ‘নুহাশ পল্লী’। তাঁর বেশির ভাগ সময়ই কাটত নুহাশ পল্লীর শাল গজারির সাথে কথা বলে, বৃষ্টির শব্দের সাথে মিতালি করে।

উপন্যাস:
নন্দিত নরকে, লীলাবতী, কবি, শঙ্খনীল কারাগার, মন্দ্রসপ্তক, দূরে কোথায়, সৌরভ, নী, ফেরা, কৃষ্ণপক্ষ, সাজঘর, বাসর, গৌরিপুর জংশন, নৃপতি, অমানুষ, বহুব্রীহি, এইসব দিনরাত্রি, দারুচীনি দ্বীপ, শুভ্র, নক্ষত্রের রাত, কোথাও কেউ নেই, আগুনের পরশমনি, শ্রাবণ মেঘের দিন, বৃষ্টি ও মেঘমালা, মেঘ বলেছে যাবো যাবো, জোছনা ও জননীর গল্প প্রভৃতি।

চলচ্চিত্র:
আগুনের পরশমনি, শ্যামল ছায়া, শ্রাবণ মেঘের দিন, দুই দুয়ারী, চন্দ্রকথা, নয় নম্বর বিপদ সংকেত।

পুরস্কার:
একুশে পদক (১৯৯৪), বাংলা একাডেমী পুরস্কার (১৯৮১), হুমায়ুন কাদির স্মৃতি পুরস্কার (১৯৯০), লেখক শিবির পুরস্কার (১৯৭৩), মাইকেল মধুসূধন দত্ত পুরস্কার (১৯৮৭), জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার (১৯৯৩ ও ১৯৯৪), বাচসাস পুরস্কার (১৯৮৮)।

দেশের বাইরেও সম্মানিত হয়েছেন হুমায়ূন আহমেদ। জাপানের ‘NHK’ টেলিভিশন তাঁকে নিয়ে ‘Who is who in Asia’ শিরোনামে পনের মিনিটের একটি ডকুমেন্টারি প্রচার করে।
তথ্যসূত্র: gunijan.org.bd

মঙ্গলবার, ২৬ জুন, ২০১২

ডিজিটাল ফটোগ্রাফি আর ক্যামেরা সম্পর্কিত কিছু টিপস


ছবি তোলার ব্যাপারে আমার আগ্রহ খুব বেশি। কিন্তু কখনো ভালো ছবি তুলতে পারিনি। আমার ভালো ছবিও কেউ তুলে দিতে পারেনি। এজন্য সবসময় আমার অতৃপ্তি লেগেই থাকে। কিন্তু আমি সবসময় চেষ্টা করি, ছবি তুললে সেটা যেন ভালো হয়।
মূলত: নিজের সংগ্রহের জন্যই কপি-পেস্ট করা। তারপরও যদি কেউ সরাসরি পড়তে চান, পড়তে পারেন।

প্রযুক্তি এগিয়েছে, তাই ক্যামেরা এখন হাতে হাতে। ছোট বড় মাঝারি ডিজিটাল ক্যামেরা এখন অনেকেই ব্যবহার করেন। এ ক্যামেরার যত্ন এবং ভাল ছবি তোলার নানা বিষয় নিয়ে এ আয়োজন।

ক্লিক ক্লিক ক্লিক!
পরামর্শ দিয়েছেন
ফটো সাংবাদিক পাভেল রহমান | তারিখ: ২১-০৫-২০১০

ভালো ছবি তোলার কৌশল
 দিনের আলোতে ছবি তুলতে হলে সকালে অথবা বিকেলে ছবি তুললে ভালো হয়। সূর্য ওঠা থেকে দুই ঘণ্টা পর্যন্ত এবং ডুবে যাওয়ার আগের দুই ঘণ্টার মধ্যে ছবি তোলা ভালো। তবে বিশেষ ঘটনা বা সংবাদচিত্রের ক্ষেত্রে এ নিয়ম মেনে চলা যায় না।
 সবচেয়ে ভালো হয়, ভোরবেলা অথবা সন্ধ্যার আগে আগে ছবি তুললে। তখন ছবিতে অনেক ভালোভাবে আলোর ব্যবহার করা যায়। সকালে ও বিকালে সূর্যের আলো কিছুটা হেলে পড়ার কারণে আলো-ছায়ার পার্থক্য অনেক ভালোভাবে ধরা যায়।
 সকালে বা বিকেলে মানুষের মুখোচ্ছবি (পোর্ট্রেট) তুললে ভালো ছবি পাওয়া যায়।
 বিয়েবাড়িতে ছবি তুলতে হলে ফ্ল্যাশ লাইট কম ব্যবহার করুন। বিয়েবাড়িতে সাজগোজের ক্ষেত্রে মেকআপের ব্যবহার বেশি হওয়ায় ফ্ল্যাশের আলো দিয়ে ছবি তুললে ছবি খারাপ হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। এ ক্ষেত্রে ক্যামেরার সঙ্গে থাকা (বিল্ট-ইন) ফ্ল্যাশ দিয়ে ছবি তুললে ছবি ভালো পাওয়া যাবে।
 ছবি তোলার সময় ছবির পেছনে সাদা রং না রাখাই ভালো।
 আপনি কী তুলবেন, সেটা সবার আগে আপনার মাথায় নিয়ে আসতে হবে। প্রথমেই ছবি তোলার বিষয়বস্তু ঠিক করতে হবে।
 পোর্ট্রেটের ক্ষেত্রে আপনি যার ছবি তুলবেন, তার মুখের যে দিকটা দেখতে সুন্দর, সেদিকে খেয়াল করে ছবি তুলতে পারেন।
 কোনো শিশুর ছবি তুলতে হলে তার আকারের (উচ্চতা) কথা চিন্তা করে ছবি তুলুন।
 কোনো ব্যক্তি যদি রেগে থাকেন, সেই অবস্থায় ছবি না তোলাই ভালো। আনন্দময় অভিব্যক্তির ছবি তুললে যে কারোরই ছবি ভালো হবে।
 কোনো অনুষ্ঠানের ছবি তুলতে হলে (বাড়িতে কারও নাচের ছবি) তার বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গির ছবি তোলার চেষ্টা করতে হবে। তা হলে কোনো একটি ভালো ছবি পেয়ে যাবেন।
 গ্রুপ ছবিতে যেন সবাই সাবলীল থাকে, সেভাবে ছবি তুলবেন। যেন ছবিটায় একটা আনন্দময় অনুভূতি পাওয়া যায়।
 ফুলের সঙ্গে ছবি তুলতে হলে, যার ছবি তুলবেন সে যেন সাবলীল ও হাস্যোজ্জ্বল থাকে।
 বেশি আলোতে ছবি তুললে, যার ছবি তুলবেন তার চোখেমুখে আলো পড়ে খারাপ যাতে না দেখায় সেদিকে লক্ষ রাখুন।
 দর্শনীয় স্থাপনার ছবি তুলতে গেলে (সংসদ ভবন, শহীদ মিনার) স্থাপনা থেকে কিছুটা দূরে এসে ছবি তুললে ভালো হয়। স্থাপনা থেকে দূরে এসে ছবি তুললে সেটির আশপাশের অনেক কিছুই ভালোভাবে তোলা যাবে।
 মনোরম প্রাকৃতিক দৃশ্যের ছবি তুলতে গেলে পুরো দৃশ্য আসে—এমন জায়গা থেকে ছবি তুললে অনেক ভালো ছবি পাওয়া যাবে।
 বাইরে সূর্যের আলোতে ছবি তুলতে হলে লক্ষ রাখবেন, ক্যামেরার লেন্সে যেন কোনোভাবেই আলো প্রবেশ না করে।
 সমুদ্রের পানিতে সূর্যের ছবি তোলার জন্য ক্যামেরায় জুম লেন্স ব্যবহার করতে পারেন। এতে সূর্যের অনেক ভালো ছবি তোলা যাবে।
 কক্সবাজারে সূর্য ওঠার সময় থেকে সকাল ১০টার মধ্যে অনেক ভালো ছবি পাওয়া যাবে।
 প্রখর রোদে (বেলা ১১টা থেকে বিকেল তিনটা পর্যন্ত) ছবি না তোলাই ভালো।
 গ্রুপ ছবি তোলার সময় ক্যামেরায় ওয়াইড লেন্স ব্যবহার করলে ভালো।
 দূরের ছবি তোলার জন্য টেলিলেন্স ব্যবহার করলে অনেক ভালো ছবি পাওয়া যায়।
 কোনো পোর্ট্রেট বা শিশুর ভালো ছবি তুলতে হলে, তাকে না জানিয়ে ছবি তুলুন।এতে স্বাভাবিক ছবি পাওয়া যাবে। তাই যার ছবি তুলবেন, তাকে না জানিয়ে তুলুন।
 ক্যামেরা দিয়ে ভালো ছবি তুলতে চাইলে, ছবি তোলাকে ভালোবাসতে হবে।
 ছবি নিয়ে সৃষ্টিশীল কাজ করতে চাইলে অন্তর্দৃষ্টি অনেক বেশি প্রখর হওয়া প্রয়োজন।
 আপনি যে বিষয়টি নিয়ে ছবি তুলতে চান, সেটা আগে থেকে ঠিক করে নিন।
 ছবিতে কী রাখবেন, কী রাখবেন না, সেটা আগে থেকে পরিষ্কার চিন্তা করতে হবে।
 কারও পোর্ট্রেট সরাসরি না তোলার চেয়ে কিছুটা কৌণিকভাবে ডানে-বাঁয়ে ঘুরিয়ে তুললে ছবিটা খুব ভালো হবে।
 যার ছবি তুলবেন, তার চোখে যদি চশমা থাকে, খেয়াল রাখুন চশমা থেকে আলোর প্রতিফলন যেন না হয়।
 রাতে ছবি তোলার সময় ফ্ল্যাশ ব্যবহার করতে পারেন। আলো থাকলে ফ্ল্যাশ ব্যবহার না করে ছবি তোলার চেষ্টা করুন। তখন আইএসও বাড়িয়ে দিতে পারেন।
 অনেকে ২১ ফেব্রুয়ারি শহীদ মিনারের ছবি তুলতে পছন্দ করেন। শহীদ মিনারের ছবি তুলতে হলে ভোরের আগে যেতে হবে। এ সময় অনেক ভালো ছবি পাওয়া যাবে।
 আলোকসজ্জার ছবি তুলতে চাইলে একেবারে অন্ধকারে না গিয়ে আকাশের আলো বা অন্য আলোর সঙ্গে তুললে ভালো ছবি পাওয়া যাবে।
 পয়লা বৈশাখে অনেক বেশি রঙের ব্যবহার করা হয়। তাই মানুষ, পোশাক, মুখোশ বা শোভাযাত্রার ছবি তোলার জন্য সকালটাকে বেছে নিতে হবে।
 যার ছবি তুলবেন, তার থেকে যেন পটভূমির (ব্যাকগ্রাউন্ড) আলো বেশি উজ্জ্বল না হয়।
 কারও পোর্ট্রেট তুলতে চাইলে, ঘুমের পরে ছবি তুললে অনেক ভালো ছবি পাওয়া যাবে।
 পোর্ট্রেট তোলার সময় লক্ষ রাখতে হবে, যার ছবি তুলবেন সে যেন কখনো মূর্তির মতো হয়ে না থাকে। তাকে সাবলীল রাখার চেষ্টা করুন।
 পেশাদার আলোকচিত্রি হতে চাইলে অনেক বেশি ছবি তোলার দরকার নেই। কম ছবি তোলার মধ্যে আপনার চাহিদামতো ছবিটি পেয়ে যেতে পারেন।
 বিশেষ পেশা বা কারণ ছাড়া অনেক বেশি ছবি তুললে আপনার সৃষ্টিশীলতা কমে যেতে পারে। তাই কম ছবি তুলে উপযুক্ত ছবিটি নির্বাচন করাই ভালো।

ডিজিটাল ক্যামেরার কথা
সাধারণ ডিজিটাল ক্যামেরা বা ডিজিক্যামে ছবি বা ভিডিও ধারণ করা হয় ইলেকট্রনিক ইমেজ সেন্সর দিয়ে। ডিজিটাল ক্যামেরায় ছবি ধারণের তিন ধরনের পদ্ধতি রয়েছে। এগুলো নির্ভর করে ক্যামেরার যন্ত্রাংশ, রং ও ফিল্টারের ওপর। প্রথম পদ্ধতিটিকে বলে সিঙ্গেল শট। এটি নির্ভর করে কত সময় পরপর ক্যামেরার আলো ক্যামেরার লেন্স থেকে ক্যামেরার সেন্সরের ওপর পড়ে। সিঙ্গেল শট একটি সিসিডি (চার্জড কাপলড ডিভাইস) ও বায়ার ফিল্টার মোজাইক ব্যবস্থায় কাজ করে অথবা তিনটি আলাদা সেন্সর ব্যবহার করে কাজ করে। দ্বিতীয় পদ্ধতিটি হলো মাল্টি শট। এ পদ্ধতিতে ছবি তোলার ক্ষেত্রে যে ছবিটি তোলা হবে, তার কাছে সেন্সরটি ধারাবাহিকভাবে তিনবার প্রদর্শিত হয়। তৃতীয়টিকে বলা হয় ইমেজ স্ক্যানিং পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে সেন্সরটি ডেস্কটপ স্ক্যানারের মতো ফোকাল প্ল্যানের চারদিকে ঘুরতে থাকে।

ক্যামেরার যত্নআত্তি

 ক্যামেরা কেনার আগে দেখতে হবে কোন ব্র্যান্ডের ক্যামেরা কিনছেন। সেই ব্র্যান্ডের ক্যামেরার জন্য বাংলাদেশে পরিবেশক কে, পরিবেশকের নিজস্ব সার্ভিস সেন্টার আছে কি না এবং সেই সার্ভিসিং সেন্টারে দক্ষ জনবল আছে কি না, সেটা জেনে ক্যামেরা কেনা ভালো।
 ক্যামেরায় কী কী সুযোগ-সুবিধা আছে, ক্যামেরার গুণগত মান দেখে নেওয়া উচিত। আপনার চাহিদা অনুযায়ী ক্যামেরা কিনছেন কি না, সেটা ঠিক করুন।
 বাংলাদেশ যেহেতু জল-কাদা, ধুলা-বালিতে পরিপূর্ণ, তাই এসব থেকে ক্যামেরা দূরে রাখার চেষ্টা করুন।
 ক্যামেরা কেনার সময় ব্যাগ বা ক্যামেরা রাখার খাপ কিনে নিন, ক্যামেরা বহন করার জন্য।
 পানি ও তরলজাতীয় পদার্থ ক্যামেরার বড় শক্র। বিশেষ করে সমুদ্রের নোনা পানি।
 সমুদ্রের পানি থেকে ক্যামেরা সুরক্ষিত করে, তবেই সমুদ্রসৈকতে আনন্দ করুন। কেননা সমুদ্রের পানিতে ক্যামেরা পড়ে গেলে সেটি আর কোনো দিন ঠিক হয় না।
 ক্যামেরা ব্যবহার করার সময় রিস্ট বেল্ট হাতে বা কাঁধের সাঙ্গে আটকে রাখুন। এতে ক্যামেরা পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা অনেক কম থাকে।
 প্রয়োজন হলে পানি নিরোধক (ওয়াটার প্রুফ) খাপ ব্যবহার করতে পারেন। বাজারে এখন অনেক ওয়াটার প্রুফ ক্যামেরাও পাওয়া যায়। এ ক্যামেরা ব্যবহার করার সময় পানিতে পড়ে গেলেও নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা নেই বললেই চলে।
 ঘন কুয়াশার মধ্যে ক্যামেরা ব্যবহার না করা ভালো। এতে কুয়াশার জলকণা ঢুকে ক্যামেরা নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
 শীত বা বর্ষার সময় শুষ্ক স্থানে নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় ক্যামেরা রাখুন।
 ক্যামেরা ভালো রাখার জন্য সিলিকন বা সিলিকা জেল ব্যবহার করতে পারেন। সিলিকন জেল ব্যবহার করার ক্ষেত্রে কিছুটা সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। অনেক সময় সিলিকন জেল ক্যামেরার মধ্যে প্রবেশ করলে ক্ষতি হতে পারে।
 ক্যামেরা ব্যবহার করার পর ব্যাটারি খুলে রাখা উচিত। ব্যাটারি খুলে ক্যাপসহ ব্যাটারি সংরক্ষণ করে রাখুন।
 ভ্রমণের সময় ক্যামেরার ব্যাটারি খুলে রাখাই ভালো। ক্যামেরায় ব্যাটারি লাগানো থাকলে যেকোনো সময় ক্যামেরা চালু হয়ে যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে ক্যামেরা নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে।
 লক্ষ রাখা উচিত, ব্যাটারি চার্জ করার সময় পূর্ণ চার্জ (ফুল) হয়েছে কি না।
 ক্যামেরা একটি সংবেদনশীল যন্ত্র। তাই ক্যামেরা এক হাতে ব্যবহার করা উচিত। অন্যথায় ছবি তোলার সময় ক্যামেরায় অনেক সমস্যা দেখা দিতে পারে।
 ক্যামেরায় সমস্যা দেখা দিলে নিজে ঠিক করার চেষ্টা না করে ভালো সার্ভিসিং সেন্টারে নিয়ে যাওয়া উচিত।
 মেমোরি কার্ড ব্যবহার করার সময় বিশেষ সতর্ক থাকা উচিত।
 কোথাও বেড়াতে গেলে সঙ্গে একাধিক বা বেশি ধারণক্ষমতার মেমোরি কার্ড রাখা উচিত।
 ক্যামেরার ছবি যত দ্রুত সম্ভব কম্পিউটার বা অন্য কোনো স্থানে কপি করে সংরক্ষণ করে রাখা উচিত।
 বর্তমানে বাজারে কমবেশিসব স্টিল ক্যামেরায় ভিডিওচিত্র ধারণের সুবিধা আছে। স্টিল ক্যামেরায় একটাকা বেশি সময়ের ভিডিও ধারণ করা উচিত নয়।
 স্টিল ক্যামেরায় একনাগাড়ে সবোর্চ্চ পাঁচ থেকে দশ মিনিট রেকর্ড করা ভালো। এর চেয়ে বেশি রেকর্ড করলে ক্যামেরার ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। ভিডিও রেকর্ড করলে দ্রুত চার্জ ফুরিয়ে যায় এবং ব্যাটারির স্থায়িত্ব অনেক কমে যায়।
 ব্যবহারকারী লক্ষ রাখবেন, ক্যামেরার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ব্যাটারি, চার্জার, মেমোরি কার্ড এবং অন্যান্য যন্ত্রাংশের কোনো বিক্রয়োত্তর সেবা দেয় না।
পরামর্শ দিয়েছেন আবদুল্লাহেল সাফী, মহাব্যবস্থাপক জেএএন অ্যাসোসিয়েটস

ডিএসএলআর ক্যামেরার কথা
ডিএসএলআর বা ডিজিটাল সিঙ্গেল লেন্স রিফ্লেক্স ক্যামেরা মূলত পেশাদার আলোকচিত্রিরা ব্যবহার করেন থাকে। এর গঠন সাধারণ মানের ডিজিটাল ক্যামেরার চেয়ে কিছুটা আলাদা। এ ধরনের ক্যামেরা তৈরিতে যান্ত্রিক আয়না (বিশেষ ধরনের আয়না) ও পেন্টাপ্রিজম নামের বিশেষ ধরনের প্রিজম ব্যবহার করা হয়। ক্যামেরা দিয়ে যে ছবিটি তোলা হবে, তার আলো যান্ত্রিক আয়নার মাধ্যমে ক্যামেরার ভিউফাইন্ডারে দেখা যায়। যে ছবিটি তোলা হবে তার আলো লেন্সের মধ্য দিয়ে রিফ্লেক্স মিররে আসে। এ ক্ষেত্রে রিফ্লেক্স মিররটি সব সময় পেন্টাপ্রিজমের সঙ্গে ৪৫ ডিগ্রি কোণে থাকতে হবে। রিফ্লেক্স মিরর থেকে অনুজ্জ্বল ফোকাসিং স্ক্রিন ও কনডেনসিং লেন্স হয়ে পেন্টাপ্রিজমে চলে যায়। সেখান থেকে ক্যামেরা ব্যবহারকারী আইপিসের মাধ্যমে ছবি দেখতে পায়। ছবির ফোকাসিং কয়েক ধরনের হতে পারে। অটোফোকাস হলে ব্যবহারকারীকে লেন্স নাড়াতে হবে না।আবার ক্যামেরার শাটার কিছুটা চাপ দেওয়া হলেও লেন্স তার ফোকাস ঠিক করা শুরু করতে পারে। যখন ক্যামেরার শাটার চাপ দেওয়া হয়, তখন রিফ্লেক্স মিররটি সোজা হয়ে যায় এবং ইমেজ সেন্সর ছবিটিকে সাটারের মধ্যে দিয়ে নিয়ে যায়।

লাল চোখ দূর করুন
সাধারণত রাতের বেলায় কম আলোতে ফ্ল্যাশ দিয়ে মানুষের মুখমণ্ডল বরাবর ছবি তুললে চোখের মণি লাল হতে দেখা যায়। মণি লাল হয়ে যাওয়াকে রেড-আই এফেক্ট বলে। কম আলোয় মানুষের চোখের ডায়াফ্রাম বড় হয়ে খুলে থাকে। এ অবস্থায় ফ্ল্যাশের আলো চোখের ওপর পড়লে খোলা আইরিসের লাল ছবি দেখা যায়।

দূর করার উপায়:
ছবি তোলার সময় যদি ঘরের অন্যান্য অংশে মোটামুটি উজ্জ্বল কোনো আলোক-উৎস থাকে অথবা ক্যামেরার ফ্ল্যাশ যদি লেন্স বরাবর না থেকে তুলনামূলক দূরে থাকে তবে রেড আই এফেক্ট হবে না। এ ছাড়া এখনকার অধিকাংশ ডিজিটাল ক্যামেরাতে এ ধরনের এফেক্ট কমানোর অপশন থাকে। ছবি তোলার আগে সেটি চালু করে নিতে হবে।

কোন ফরম্যাট কেন?
 ডিজিটাল ক্যামেরায় আগে থেকে নির্ধারণ করা (ডিফল্ট) ফরম্যাট হচ্ছে জয়েন্ট ফটোগ্রাফি এক্সপার্টস গ্রুপ (জেপিইজি)।
 যেকোনো ছবি দেখতে, সম্পাদনার ক্ষেত্রে জেপিইজি ফরম্যাট ভালো।
 সাধারণভাবে ছবি তোলা, ছবি আদান-প্রদান করার জন্য ভালো ফরম্যাট হচ্ছে জেপিইজি। তবে গ্রাফিকস ও যেকোনো মুদ্রণের জন্য ভালো ফরম্যাট হচ্ছে ট্যাগড ইমেজ ফাইল ফরম্যাট (টিআইএফএফ)।
 ই-মেইলে ছবি পাঠাতে হলে জেপিইজি ফরম্যাটে পাঠানো ভালো। এর কোয়ালিটি ৬ ও মিডিয়াম রাখা উচিত।
 যেকোনো পরস্থিতিতে ভালো ছবি তুলতে স্বয়ংক্রিয় হোয়াইট ব্যালান্স ব্যবহার করা ভালো। বিশেষ ছবি বা দক্ষ আলোকচিত্রী নিজে হোয়াইট ব্যালান্সের মান ঠিক করে নিতে পারেন।
 র (আরএডব্লিউ) ফরম্যাটে ছবি তুলে পরে যেকোনো ফরম্যাটে নেওয়া যায়। ছবির আকার ইচ্ছেমতো বাড়ানো বা কমানো যায়। র ছবির ফাইলের আকার বেশ বড় হয়। তাই  র ফরম্যাটে ছবি তুলতে বেশি ধারণক্ষমতার মেমোরি কার্ড লাগে।
 র ফরম্যাটে সৃজনশীল ছবি তোলার জন্য পাওয়া যায় অপার স্বাধীনতা।
 ছবি সম্পাদনার জন্য জনপ্রিয় সফটওয়্যার হচ্ছে অ্যাডোবি ফটোশপ।
 র ফরম্যাটে ছবি তুললে তা সম্পাদনার ক্ষেত্রে ফটোশপের সিএস সংস্করণ লাগবে। এ ছাড়া ক্যামেরার সঙ্গে দেওয়া সফটওয়্যার দিয়েও র ছবি সংগ্রহ ও সম্পাদনা করা যায়।
 বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ক্যামেরায় র মোডের নামের ভিন্নতা রয়েছে।
 প্রতিটি ব্রাউজারে খোলে এমন আরেকটি ফরম্যাট হচ্ছে পিএনজি।
 ছবি সংরক্ষণের আরেকটি ফরম্যাট হচ্ছে জিআইএফ। এই ফরম্যাটে তোলা ছবি পরে অ্যানিমেশনের কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে।
 যেকোনো ছবি সংরক্ষণের ক্ষেত্রে আছে বিট ম্যাপ ইমেজ (BMP) ফরম্যাট।
 ছবি সম্পাদনার ক্ষেত্রে প্রতিটি সফটওয়্যারের নিজস্ব ফরম্যাট রয়েছে।
 যেকোনো ছবি না খুললে কিংবা কোনো ফরম্যাট না দেখালে তাতে নামের পাশে (.JPEG) লিখে দিলে তা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে খুলবে।
 ফিক্সড ফোকাসের ক্যামেরায় স্বয়ংক্রিয় উন্নত ব্যবস্থা রয়েছে, যাতে ভালো ছবি তোলা যায়।

যত্ন ও সতর্কতা
 ক্যামেরা ও এর আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি যথেষ্ট মূল্যবান হয়ে থাকে। কোনো কারণে এটি অকার্যকর হয়ে গেলে সব ক্ষেত্রে সঠিকভাবে মেরামত করা সম্ভব নাও হতে পারে।
 কম্পিউটার অথবা টিভির সঙ্গে ক্যামেরা লাগানোর আগে দেখে নিন ুবিদ্যুৎ সংযোগ ‘আর্থিং’ করা আছে কি না। কারণ হঠাৎ বিদ্যুৎ-প্রবাহের হার কমবেশিহলে ক্যামেরার ক্ষতি হতে পারে।
 কড়া রোদে ক্যামেরা রাখবেন না।
 আঘাত, চোট, ঘষা বা ঝাঁকুনি লাগাবেন না।
 রাসায়নিক পদার্থ বা পানি, ঘাম, তেল, অতিরিক্ত তাপমাত্রা ক্ষতিকর।
 মেমোরি কার্ডের জন্য বিদ্যুৎ-চৌম্বকীয় ক্ষেত্র ক্ষতিকর।
 বিদ্যুতের ভুল প্রবাহ ক্ষতিকর।
 সঠিকভাবে সমন্বয় করা যায় না এমন যন্ত্রাংশ জোর করে ব্যবহার করবেন না।
 ভুল পদ্ধতি বা শক্তি প্রয়োগ করে কোনো কাজ করার চেষ্টা করা ভালো না।
 ক্যামেরা ব্যবহারের সময় বেল্টটি হাতে অথবা গলায় ঝুলিয়ে রাখা উচিত।
 অযথা ক্যামেরার কোনো অংশ টানাটানি, ঘোরানো বা বারবার খোলা-বন্ধ করা হলে প্যাঁচ কেটে যেতে পারে অথবা গুরুত্বপূর্ণ অংশ নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
 বোতাম আছে এমন কাপড় পরে ক্যামেরা ব্যবহার না করা ভালো। কারণ ক্যামেরা গলায় ঝুলিয়ে রাখার সময় বোতাম থেকে ক্যামেরার এলসিডি পর্দায় ঘষার দাগ পড়তে পারে।

পিক্সেল আর মেগাপিক্সেল
ডিজিটাল ক্যামেরার কথা এলেই সবার আগে প্রশ্ন আসে ক্যামেরাটি কত মেগা পিক্সেলের। পিক্সেলের হিসাব করে ব্যবহারকারী তার ডিজিটাল ক্যামেরার মান যাচাই করতে পারে। পিক্সেল শব্দটির অর্থ হলো পিকচার এলিমেন্ট বা ছবির অংশবিশেষ। পিক্স শব্দটি এসেছে ‘পিকচার’ থেকে এবং এল শব্দটি এসেছে ‘এলিমেন্ট’ থেকে। এই দুয়ে মিলে পিক্সেল। ডিজিটাল ছবির ক্ষেত্রে পিক্সেল ছবিটির সবচেয়ে ছোট অংশ।
এ ছোট অংশ মিলেই ছবিটি পূর্ণাঙ্গ রূপ পায়। একেকটি পিক্সেল পূর্ণাঙ্গ ছবিকে আকার দেয়, তাই পিক্সেল যত বেশি হয় ছবির মান তত ভালো হয়। ডিজিটাল ছবিতে পিক্সেল দ্বিমাত্রিক গ্রিড আকারে সাজানো থাকে।
একটি পিক্সেল খুব ছোট, তাই এটি খালি চোখে দেখা যায় না। তবে ছবিকে জুম করা হলে পিক্সেল আলাদাভাবে চিহ্নিত করা যায়। একেক ধরনের স্ক্রিন একেক ধরনের গ্রিড ব্যবহার করে। ফলে ছবির তারতম্য লক্ষ করা যায়। পিক্সেল সবচেয়ে বেশি ব্যবহূত হয় মেগাপিক্সেল হিসেবে। এক মেগাপিক্সেল ১০ লাখ পিক্সেল মিলে তৈরি হয়।

ক্যামেরা কেনার আগে...
 ব্যবহারকারীর প্রয়োজন অনুসারে এবং কাজ অনুযায়ী ক্যামেরা কেনা ভালো।
 শৌখিন ব্যবহারকারীরা ফিক্সড লেন্সের ক্যামেরা ১০ থেকে ৩৫ হাজার টাকার মধ্যে কিনতে পারেন।
 পেশাদার বা সৃজনশীল আলোকচিত্রীরা ডিজিটাল এসএলআর (সিঙ্গেল লেন্স রিফ্লেক্স) ব্যবহার করবেন। এসব ক্যামেরার দাম শুরু হয় ৪৫ হাজার টাকা থেকে।
 ডিএসএলআর ক্যামেরায় লেন্স পরিবর্তন করে করে ইচ্ছেমতো ছবি তোলার স্বাধীনতা এ ক্যামেরায় আছে।
 ক্যামেরা কেনার ক্ষেত্রে অবশ্যই ভালো ব্র্যান্ড দেখে কেনা উচিত। বিশেষ করে যেসব ক্যামেরার অনুমোদিত সার্ভিসিং সেন্টার আছে, সেসব ব্র্যান্ডের ক্যামেরা কেনা ভালো।
 ক্যামেরার মেগাপিক্সেল যত বেশি হবে, ছবির রেজুলেশন তত বেশি হবে।
 ক্যামেরা কত মেগাপিক্সেলের হবে তা কাজ অনুযায়ী নির্বাচন করে নিন।

ডিজিটাল ক্যামেরার খুঁটিনাটি
 ক্যামেরা কেনার আগে এর ব্যবহার সম্পর্কে কিছুটা হলেও ধারণা নিতে চেষ্টা করুন।
 যেকোনো নতুন মডেল আগের সব মডেলের চাইতে সব সময় ভালো নাও হতে পারে।
 ক্যামেরা কেনার আগেই ঠিক করুন এটি কী ধরনের কাজে ব্যবহার করবেন।
 ক্যামেরা সম্পর্কে আপনার খুব ভালো ধারণ না থাকলে কেনার সময় অভিজ্ঞ আলোকচিত্রীর সাহায্য নিন।
 বিক্রয়োত্তর সেবা দিয়ে থাকে এমন প্রতিষ্ঠান অথবা ওই নির্দিষ্ট ব্র্যান্ডের দোকান থেকেই ক্যামেরা কেনা উচিত।
 যে কাজের উদ্দেশ্যে ছবিটি তুলছেন তার উপযোগী ফাইল ফরম্যাট ও রেজুলেশন নির্ধারণ করুন।
 ক্যামেরা, লেন্স বায়ুরোধী বাক্সে জলীয়বাষ্প শোষণকারী পদার্থ (ডেসিকেটিং এজেন্ট) দিয়ে সংরক্ষণ করা উচিত।
 লেন্সে ধুলো পড়লে হাত দিয়ে, ঘষে বা ফুঁ দিয়ে সরানোর চেষ্টা না করে ব্লোয়ার ব্যবহার করুন। ব্লোয়ার না থাকলে নরম কাপড় (যেমন ফ্লানেল) ব্যবহার করুন।
 শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘর থেকে বের হওয়ার ১৫-২০ মিনিট আগে ক্যামেরাটি ব্যাগে ভরে রাখুন। ক্যামেরা খোলা অবস্থায় বের করা হলে লেন্সে বিন্দু বিন্দু পানি জমা হয়। ফলে প্রথমে কিছুটা ঝাপসা মনে হবে এবং পরে লেন্সে স্থায়ী দাগ পড়তে পারে।
 কম্পিউটারে ছবি কপি করার সময় সরাসরি ক্যামেরা ব্যবহার না করে কার্ড রিডার ব্যবহার করা ভালো।
 বাইরে কোথাও যাওয়ার আগে ক্যামেরা এবং এর আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতির একটি তালিকা তৈরি করুন। তালিকা দেখে সেগুলো একসঙ্গে রাখলে ভুলে ফেলে আসার আশঙ্কা কম থাকে।
 মেমোরি কার্ডের ধারণক্ষমতা সীমিত। একসঙ্গে একাধিক ছবি তোলার জন্য রেজুলেশন কমিয়ে ছবি তোলা হলে পরে সেটি কোনো কাজে ব্যবহার করা যাবে না।
 বেশি রেজ্যুলেশনের একটি ছবি প্রয়োজনে রেজুলেশন কমিয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে কম রেজ্যুলেশনে তোলা কোনো ছবি বেশি রেজুলেশন দিয়ে ব্যবহার করতে চাইলে কখনোই ভালো মান পাওয়া যাবে না।
 ব্যবহার শেষে ক্যামেরা ব্যাগে ভরে রাখুন। কারণ ক্যামেরা ও এর আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি মূল্যবান হয়ে থাকে। অযথা বাইরে ফেলে রাখলে নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।

আলোকচিত্রীদের সঙ্গে কথা বলে এবং এ সংক্রান্ত ওয়েবসাইট থেকে পরামর্শগুলো সংগ্রহ করেছেন তারিকুর রহমান খান, নাসির খান, নুরুন্নবী চৌধুরী ও ফেরদৌস আহমেদ
 

সড়ক দুর্ঘটনা এবং অতৃপ্ত কান্নার কাহন




[নিরাপদ সড়ক চাই]
মানুষকে জীবনের প্রয়োজনে বাহিরে যেতে হয়,পথে চলতে হয়।কিন্তু এ পথেই প্রতিদিন অসংখ্য জীবন প্রদীপ নিভে যায়। ইট,পাথর,পিচের বুকে কান পাতলে শোনা যাবে অজস্র প্রানের মর্মভেদী অতৃপ্ত কান্না। যখন দুর্ঘটনা হ্রাস করার উপায় থাকতেও রাষ্ট্র ব্যবস্থা গ্রহন করে না এবং তার ফলে জনগনের প্রাণ ঝরে যায় সেটা সাধারণ মৃত্যু নয়,তা হচ্ছে হত্যা। রাষ্ট্রের উদাসীনতার ফলে অজস্র প্রাণ পথে ঝরে যায়। সর্ব প্রকার সমীকরণ একত্র করলে বিস্ময় নিয়ে ভাবতে হয় তাহলে কি রাষ্ট্র চুপ করে হত্যা করে চলছে সাধারণ মানুষকে। প্রত্যেক সংস্থার তদন্ত প্রতিবেদন দেখলে জানা যায় সরকারের স্বদিচ্ছা পারে শতকরা ৮০ভাগ দুর্ঘটনা কমিয়ে ফেলতে। তারপর ও হচ্ছে না,কেন মানুষের জীবন থেকে ব্যবসাকে বেশী মূল্যায়ন করা হচ্ছে প্রতিটি মানুষের মনে এ প্রশ্নই ঘুরে বেড়ায়। তদন্ত প্রতিবেদনগুলো দেখলে বোঝা যায়,সরকারের উদাসীনতায় কিভাবে মানুষের প্রাণ হারাচ্ছে।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) হিসাব অনুযায়ী,২০১১সাল পর্যন্ত দেশে মোট ১৪লাখ ২৩হাজার ৯৮২টি রেজিস্টার্ড গাড়ির বিপরীতে বৈধ লাইসেন্সের সংখ্যা ১০লাখ,এর মধ্যে অবৈধ লাইসেন্সে এর সংখ্যা প্রায় ৪লাখ। অবৈধ চালকদের কারনে দুর্ঘটনা অতিমাত্রায় বেড়ে চলছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। পুলিশ হেডকোয়ার্টারের এফআইআর রিপোর্ট অনুসারে,১৯৯৪সাল থেকে ২০১০সাল পর্যন্ত দেশে ৭০হাজার ৫০৭টি দুর্ঘটনা ঘটে,যার ফলে হতাহত হয় ১লাখ ৩হাজার ৬০৪জনের মত মানুষ,আর মারা যায় ৫০হাজার ৫৪০জন।তবে বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলন এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের এ সংক্রান্ত গবেষণার তথ্য অনুযায়ী দেশে প্রতিবছর সড়ক দুর্ঘটনার কারনে ১০হাজার মানুষের মৃত্যু হয়,সরকারি ভাবে মৃত্যুর সংখ্যা কম হওয়ার প্রধান কারণ হচ্ছে যেসব মৃত্যুতে মামলা হয় শুধু সেসব হিসেব করা হয়। জাতিসংঘ এর তথ্যমতে,বাংলাদেশ সবচেয়ে সড়ক দুর্ঘটনাপ্রবণ দেশ,এবং প্রবণতা এত বেশি যে রেটিং এর ১ থেকে ১৬ এর ভিতর সর্বদা বাংলাদেশের অবস্থান। বাংলাদেশ পুলিশ এর হিসেবে,রাস্তার নকশা,রক্ষণাবেক্ষণ এবং অদক্ষ চালক শতকরা ৭৫ ভাগ সড়ক দুর্ঘটনার কারণ। এক জরিপে দেখা যায় সড়ক দুর্ঘটনার মোট কারণ প্রায় ৪৫টি,এর ভিতর ৩৫ টি চালক চাইলে এই রোধ করতে পারে। যদি আইন চালকদের বাধ্য করে সেসব পদক্ষেপ নিতে তাহলে প্রথমেই ৬০ভাগ দুর্ঘটনা কমে যাবে।
দেশের সমস্ত গবেষণা প্রতিবেদন পর্যালোচনা করলে শুধু একটি বিষয় স্পষ্ট হয় যে সরকার চাইলে এই অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুর হাত থেকে জনগণকে রক্ষা করতে পারে। প্রতিটি নাগরিকের উচিত সোচ্চার আওয়াজ তোলার যেন এ মৃত্যুমিছিল অচিরেই বন্ধ হয়।রাষ্ট্রের নিরপক্ষ অবস্থান পারে নাগরিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে।কারো আপনজন যেন হারিয়ে না যায় সড়কের আঁধারে এমনটাই কামনা করি আমরা সবাই।আমরা সবাই নাগরিক সব সমস্যা নিয়ে সরকারের দৃষ্টিআকর্ষণ কামনা করছি,আশা করি দেশের সকল নাগরিক এক হয়ে সরকারের প্রতি আহ্বান জানাবে যেন মানুষ আর পথে হাড়িয়ে না যায়। সরকারের অবশ্যই চলার পথে নিরাপত্তা দিতে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। সব পন্থা জানা আছে এখন শুধু প্রয়োজন কাজ করার।সরকারের স্বদিচ্ছাই পারে সড়ক দুর্ঘটনা নামক ভয়াবহতা হ্রাস করতে।

কামনা করি আর একটিও প্রান যেন অকালে ঝরে না যায়।

বুধবার, ২০ জুন, ২০১২

এভারেষ্ট বিজয়ী ৪ সাহসী বাংলাদেশী



আমরা নতুন প্রজন্ম এই ৪ জন বীর এর পথ দেখে বাংলাদেশ কে
আরো উঁচুভে নিযে যাব.। ইনশাআল্লাহ ।

সাম্প্রতিক:রোহিঙ্গা বনাম সুচি

আলোচিত ও সমালোচিত প্রসঙ্গ হিসেবে বর্তমানে রোহিঙ্গা সমস্যা অনেক গুরুত্ব পাচ্ছে। এর চেয়ে বেশী গুরুত্ত্ব পায় অংসান সুচির রাজনৈতিক উত্তরণের বিষয়টি। সেই সুচি যখন দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে বিমুখ হয়ে বসে থাকেন তখন সত্যই সেটা প্রশ্নবিদ্ধ ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। শান্তিতে নোবেল পেয়েছেন তিনি। বিশ্বের দরবারে তিনি গণতন্ত্রের মানসকন্যা হিসেবেও পরিচিতি লাভ করেছেন। জনগণের অধিকার আদায়ে জেল খেটেছেন যুগের পর যুগ। তার মুক্তির সময় ও পরবর্তী সময়ে তার মভা-সমাবেশে, মিছিলে-মিটিঙয়ে জনগণের ব্যাপক উপস্থিতি ও ভালোবাসা-শ্রদ্ধার যে নমুনা পাওয়া গেছে তা প্রমাণ করে মায়ানমারে তার জনপ্রিয়তা ও মুক্তিকামী সাধারণ মানুষের গণতন্ত্রের প্রতি ভালোবাসা এবং সামবিক শাসনের প্রতি তীব্র বিষেদাগার। অথচ সাম্প্রতিক সময়ে রাখাইন রাজ্যে ঘটে যাওয়া সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় দেশের মানুষের পাশে এসে না দাঁড়িয়ে পশ্চিমা দেশ ভ্রমনে তিনি ব্যম্ত সময় কাটাচ্ছেণ। শান্তির জন্য প্রাপ্ত নোবেল প্রাইজ গ্রহণ করছেন।সর্বোপরি নিজেকে গুটিয়ে রাখায় তা নিয়ে অনেক প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

(ক). আধুনিক পন্ডিতেরা মনে করেন যে গণতন্ত্র হলো জনগণের শাসন। আব্রাহাম লিংকন অনেক আগেই তা বলে গেছেন। একটি দেশের সামগ্রিক জনগোষ্ঠী গণতন্ত্রের সুফল ভোগ করে থাকে। ধর্ম, বর্ণ,জাতি ,গোত্র নির্বিশেষে সকলেই এখানে অংশগ্রহণ করে থাকে। আমরা যদি মার্কিন মুলুকের দিকে তাকায় তাহলে স্পষ্ট দেখতে পায় যে সেখানে নানা ধর্ম, বর্ণ, জাতি, গোত্রের লোক মিলেমিশে গণতন্ত্রের এক আদর্শ কাঠামো তৈরি করেছে। বাংলাদেশ বিশ্বের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অনন্য সাধারণ একটি দেশ। বিশ্বের আরো অনেক গণতান্ত্রিক দেশেই আমরা এর নজির দেখতে পায়। মিয়ানমার দীর্ঘদিন সামরিক শাসনের অধীনে পরিচালিত হয়ে আসছে। ফলে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বিষয়টি সেখানে সবসময় গৌণ থেকেছে। ফলে সংখ্যালঘু মুসলিম রোহিঙ্গাদের উপর রাখাইনদের আক্রমণে সেনা সরকারের টনক নড়বে না এটাই স্বাভাবিক মনে হয়। সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় নিগৃহীত জনগণের প্রতি সরকারের চরম উদাসিনতা প্রমাণিত হয়েছে। ফলে দেশটি যে গণতান্ত্রিক উত্তরণের পথে এগিয়ে যাচ্ছে তা নিয়ে অনেক প্রশ্নের উদ্রেক হতে পারে। কিন্তু এ ঘটনায় সুচির নির্লিপ্ততা কতটুকু গ্রহণযোগ্য তার বিচার রাজনীতি বিশেষজ্ঞরা করবেন। তবে আমাদের কাছে তা সুখকর মনে হয়নি।
(খ).নির্বাচন গণতান্ত্রিক ব্যাবস্থার নিউক্লিয়াস হিসেবে বিবেচিত হয়। কিছুদিন আগের একটি নির্বাচনে সুচির এনএলডি অনেক ভালো করেছে। তিনি আশাবাদী যে সামনের যে কোন নির্বানে তিনি ভাল করবেন। এজন্য হয়ত তার ক্ষুদ্র বোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ভোট কোন প্রভার ফেলতে পারবে না। কিন্তু একথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, এ দাঙ্গার ঘটনায় দেশের জনমত পরিবর্তিত হয়ে যেতে পারে। ইতোমধ্যে রোহিঙ্গারা রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ঢুকে পড়ছে,যা সামরিক সরকারকেও ভাবিয়ে তুলেছে। ফলে তারা রোহিঙ্গাদের অনেক দেরিতে হলেও এখন রাখাইন রাজ্যে ধরে রাখতে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। সে দেশের বিভিন্ন স্থানে দাঙ্গা নিয়ন্ত্রন ও মানবিক বিপর্যয় রোধকল্পে ব্যাকস্থা গ্রহণের জন্য দারি উঠছে। সুচির বিরোধীরা একে একটা হাতিয়ার হিসেবে ব্যাবহার করতে পারে। যার একটা ফল হয়ত পরবর্তী নির্বাচনে দেখা গেলেও আশ্চর্য হওয়ার কিছু থাকবে না। সুচির ব্যাপক জনপ্রিয়তায় তারতম্য কিছুটা হলেও ঘটবে বলে অনেকেই ধারণা করছেন। সুচির উচিত ছিল বিদেশ সফর বাতিল বা স্থগিত করে সঙ্গে সঙ্গে দেশে ফিরে এসে এ ব্যাপারে সোচ্চার হওয়া ।
(গ). এ উপমহাদেশের রাজনীতিতে ধর্ম একটা বয ফ্যাকটর। হিন্দু-মুসলিম ধর্মভিত্তিক রাজনিতি ভারত-বাঙলার রাজনৈতিক ইতিহাসের সবচেয়ে শক্তিশালী অধ্যায় বলে মনে করার কারণ আছে। ভারতে মুসলিম আগমন থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত ধর্ম রাজনীতিকদের অন্যতম বর্ম ও হাতিয়ার। গান্ধী, জিন্নাহ, মেহেরু. সোহরাওয়ার্দী, ফজলুল হক প্রমুখ উদার ও অসাম্প্রদায়িক মেতা হিসেবে পরিচিত থাকলেও আপন বা রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধিতে তারা ধর্মকে ব্যাবহার করতে ভোলেনি। ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশে ধর্ম এখনো জনমতকে অনেকাংশে প্রভাবিত করতে পারে। মায়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলিম জনগোষ্ঠী সেদেশের সামরিক রাজনীতিতে কোন প্রকার প্রভাব সৃষ্টি করতে পারেনি। বর্তমানে গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রায় তারা নিজেদের নিরাপদ ভাবতে শুরু করেছিলেন। কিন্তু বিধি বাম। এমনকি সুচি যখন একটি কথাও বললেন না তখন তারা দলে দলে বাংলাদেশের দিকে ধাবিত হতে থাকে।সুচি যদি সংখ্যাগরিষ্ঠ বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের সমর্থনের আশায় নিজেকে এ ব্যাপারটি থেকে নিজেকে বিরত থাকেন তাহলে হয়ত ভুল করলেন। বৌদ্ধ ধর্মদর্শনের মুলকথা হলো অহিংসা। ঘর বাড়ি জ্বালিয়ে, মানুষ হত্যা করে গৌতম বুদ্ধের অনুসারীরা এক ঘৃণ্য নজির স্থাপন করলেন্। সুচিও ক্ষুদ্র ধর্মস্বার্থের আড়ালে নিজেকে গণতান্ত্রিক দৈত্যে পরিণত করলেন এবং এ উপমহাদেশের নোংরা ধর্মীয় রাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসতে পারলেন না।
(ঘ).তৃতীয় বিশ্বের গণতন্ত্র যে ক্ষমতা দখলের হাতিয়ার সুচি তা আরো একবার চোখে আঙুল দিয়ে দেথিয়ে দিলেন। রোহিঙ্গারা মায়ানমারের মোট জনসংখ্যার তুলনায় সংখ্যায় কম হলেও তারা কিন্তু বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় একটি সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব করছে। মুসলিম বিশ্বে এ ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রয়া লক্ষ্য করা গেছে। ফলে গণতন্ত্রকামী মুসলিম বিশ্ব সুচিকে ভালভাবে দেখবে না একথা সত্য। এ বিষয়টি তিনি হয়ত রাষ্টের প্রধার হলে তার জন্য নেতিবাচক প্রাভার বয়ে আনতে পারে। তথাপি তিনি এগুলো ভেবে বা না ভেবে যাই হোক না কেন ক্ষমতা দখলকে সম্ববত তার কার্যক্রমের শীর্ষে রেখেছেন। এব্শেষত্রে তার সংখ্যাগরিষ্ঠ বৌদ্ধ জনগোষ্ঠীর সমর্থন হারানোর ভয় তার ছিল। তার মানে কি এরই প্রমাষ বহর করেন্ যে গণতন্ত্র মানে যেকোন প্রকারে ক্ষমতা দখলের প্রয়ার মাত্র। আর জনগলের শাসন, জনমত, সমানাধিকার, মানবাধিকার প্রভৃতি ক্ষমতা দখলের বায়না মাত্র বলে আমরা মনে করতে পারি।এ উপমহাদেশের প্রায় প্রতিটি দেশে আমরা এর সফল প্রয়োগ দেখতে পায়।
(ঙ).সুচির নিষ্ক্রিয়তার আরো একটি কারণ থাকতে পারে এ কারলে যে পশ্চিমা বিশ্বের নীতি ও আদর্শের প্রতি তার অকুণ্ঠ ও আপসহীন সমর্থন। তৃতীয় ও উন্নয়নশীল দেশে পশ্চিমারা গণতন্ত্রের মুলো ঝুলিয়ে নিজ স্বার্থসিদ্ধিতে ব্যস্ত থাকে। গণতন্ত্র জনগলের শাসন না হয়ে পুঁজিবাদী এসব দেশের অর্থনৈতিক সুবিধা অর্জনের অস্ত্রে পরিণত হয়। মায়ানমারের ক্ষেত্রে সুচি হলো পশ্চিমাদের এক নম্বর হাতিয়ার। চিন-মায়ানমার সম্পর্ক তাদের জন্য একটি বিরাট চ্যালেঞ্জ। এ সম্পর্ককে প্রভাবিত করতেই এদেশের প্রতি তাদের এত গণতান্ত্রিক দরদ। অনেকেই বলে থাকেন তার নোবেল প্রাপ্তি এই দরদেরই অংশমাত্র। একদিকে দেশে হত্যাযজ্ঞ চলছে অন্যদিকে ইউরোপে সুচিকে দেয়া হচ্ছে রাজকীয় সম্মান।কারণ পশ্চিমারা জানে সুচি এ ব্যাপারে তৎপর হলে সংখ্যাগরিষ্ঠ বৌদ্ধ জনগণের সমর্থন হারাতে পারেন।তাদের এতদিনের পরিকল্পনা ধূলিস্যাৎ হয়ে যেতে পারে। আমরা কোনভাবেই মনে করতে পারিনা যে সুচি এসব ব্যাপারে ওয়াকেফহাল নন। বরং খরে নেব তিনি জেনে বুঝেই এ পথে পাড়ি জমিয়েছেন এবং রোহিঙ্গা নিপীড়িত জনগণের পাশে দাঁড়াননি।
(চ).রোহিঙ্গা সমস্যা মায়ানমারের বৈদেশিক সম্পর্ককে অনেকাংশে প্রভাবিত করেছে। প্রতিবেশী বাংশাদেশে ইতোমধ্যে অনেক রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে, যা সরকারের যথেষ্ট মাথাব্যাথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। জনবিস্ফোরণের ভেতরে এসব রোহিঙ্গাদের অবস্থান বাংলাদেশের জন্য আসলেই একটা চ্যালেঞ্জ। তারপর আবার নতুন করে তাদের এদেশে প্রবেশ এবং এতে মায়ানমার কর্তৃক বাধা না দেয়া সত্যিই কূটনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভূত। স্বৈরশাসক থার শোয়ে এ ব্যাপারে কথা না বললেও সুচির তৎপর হওয়া উচিত ছিল। নিকটতম প্রতিবেশী হিসেবে বাংলাদেশের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখা সে দেশের জন্য একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ্। সামরিক সরকার এ ব্যাপারে পদক্ষেপ না নিলেও সুচি জনমত গড়তে পারতেন। ভূ-কৌশলগত কারণে বাংলাদেশ এশীয়-বিশ্ব রাজনীতিতে অত্যন্ত আলোচিত ও সম্ভাবনাময় একটি দেশ। ফলে মায়ানমারের গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ কে সুসংহত করতে বাংলাদেশর সাথে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কোন্নয়নের লক্ষ্যে কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে এ সমস্যার সমাধানকল্পে সুচির বুদ্ধিভিত্তিক ও সাহসী উদ্যোগ সকলেরই কাম্য ছিল। আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও তিনি কূটনৈতিক রাজনীতির মাধ্যমে এ সমাধান করতে পারতেন বলে আমি মনে করি।
(ছ).জনগণের বিদ্রোহ, বিপ্লব,দাঙ্গা, অসন্তোষ ও আন্দোলনকে পুঁজি করে ক্ষমতার সুফল ও সুবিধা ভোগ করে থাকে রাজনৈতিক-গনতান্ত্রিক এলিটরা। আর জনগণ থেকে যান আড়ালে অন্ধকারে। রাখাইন প্রদেলের দাঙ্গা নিয়ে হয়ত রাজনীতি করবেন সুচি। সেনা সরকারকে সমালোচনার তীরে বিদ্ধ করবেন দাঙ্গা নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হওয়ার কারণে। নিজের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি করতে সচেষ্ট হবেন। সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করবেন। হয়ত একদিন সরকারও গঠন করবেন। কিন্তু আজকের যে রোহিঙ্গা শিশুটিকে তার মা-বাবা বাঁচানোর জন্য একাকী সাগরে ভাসিয়ে দিয়েছেন তার ভবিষ্যৎ কি সুচির সরকার গঠন ইতিবাচকভাবে প্রভাবিত করতে পারবে কি? রোহিঙ্গা উদ্বাস্তু ও ছিন্নমূল জমগোশ্ঠী কতটুকুই বা পাবে সুখ-সমৃদ্ধময় স্বাভাবিক জীবনের নিশ্চয়তা? সময়ের কাছেই ছেড়ে দেয়া যাক সে বিচার।
(০২).
নাফ নদী ও বঙ্গোপসাগরে হাজার হাজার বার্মিজ নাগরিক রোহিঙ্গারা যখন স্বদেশভূমি থেকে বিতাড়িত হয়ে একটু মাথা গোঁজার ঠাঁই না পেয়ে বৃষ্টি-ঢেউয়ের মধ্যে দিনের পর দিন ভেসে বেড়াচ্ছে তখন সুচি গ্রহণ করছেন গণতান্ত্রিক আন্দোলনের জন্য প্রাপ্ত নোবেল পুরস্কার। শুধু তাই নয় এই সময়ে তাকে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে দেয়া হচ্ছে জমকালো সম্বর্ধনা।উপরন্ত রাখাইন-রোহিঙ্গা দাঙ্গায় সুচির নির্লিপ্ততা থেকে অনেকেই সন্দেহ পোষণ করছেন যে এ ঘটনা পশ্চিমা মুসলিম নিধনের ধারাবাহিক পরিকল্পনার একটা অংশমাত্র, যেটা আমার কাছে তেমন যুক্তিযু্ক্ত মনে হয়নি। স্যামুয়েল হান্টিঙটনের দ্য ক্লাস অব সিভিলাইজেশনে খ্রীস্টজগতের সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জিং ফ্যাকটর মুসলিম ও মুসলিম রাষ্ট্রসমূহ। ইরাক, ইরান, আফগানিস্তান, পাকিস্তান প্রভৃতি মুসলিম দেশের সাথে পাশ্চাত্য আচরণ এর অনেকটা প্রমান বহন করে। অনেকের মনে হলেও আমার মনে হয়না যে রাখাইন রাজ্যের ঘটনা পাশ্চাত্য মুসলিম নিধনযজ্ঞের অংশ।কারণ অবস্থান, সংখ্যা,শিক্ষা, রাজনীতি, অর্থনীতি, সংস্কৃতি, সমাজ, গোত্র প্রভৃতি বিচারে তারা কোনভাবেই পাশ্চাত্যেম মাথাব্যথার কারণ নয়।তবে বাংলাদেশ যেহেতূ বার্মার নিকটতম প্রতিবেশী এবং ভূ-কৌশলগত অবস্থান বিচারে বিশ্বের অত্যন্ত সম্ভাবনাময় মুসলিম দেশ ; তাই এ দেশের প্রতি বিষেদাগার বা সরকারকে বিব্রত করতে বা জনগণের দৃষ্টি অন্যদিকে ঘোরাতে বা চাপ সৃষ্টি করতে এ ধরণের দাঙ্গা সৃষ্টি ও উস্কানি দেয়া তাদের পক্ষে কঠিন কোন কাজ নয়।এ ঘটনা সত্যি হলে পাশ্চাত্য স্বার্থসিদ্ধিতে সুচি তার দায় কোনোভাবে এড়াতে পারবেন না। আসল ব্যাপার হলো গণতান্ত্রিক ধ্যান ধারনায় দল মত ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে দেশের জনগণের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। ইউরোপ আমেরিকার অনেক দেশে আমরা এর প্রতিফলন দেখতে পাই।মায়ানমারের অবিসংবাদিত গণতান্ত্রিক মেতা হিসেবে অংসান সুচির প্রধার কাজই ছিল দাঙ্গা নিয়ন্ত্রণে সরকারকে বাধ্য করা। রাখাইন রাজ্যের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি সমুন্নত রাখতে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করা। ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়ানো। বিদেশ সফর বাতিল বা স্থগিত করে রাখাইন রাজ্যে ছুটে যাওয়া। দাঙ্গায় ঘর-বাড়ি, সহায়-সম্পদ হারানো রোহিঙ্গাদের পৃনর্বাসনের কার্যকর ব্যাবস্থা করা।অবস্থা বুঝে তিনি প্রতিবেশী বাংলাদেশ সরকারের সাথেও কূটনৈতিক তৎপরতা চালাতে পারতেন।মোদ্দাকথা দেশের মাটিতে উপস্থিত থেকে সামগ্রিক সমাধানের প্রচেষ্টা চালালে তা উঠতি গণতান্ত্রিক এ দেশের জন্য অত্যন্ত ফলপ্রসূ হত।মুষ্টিমেয় রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সমর্থনের জন্য এত বড় ঝক্কি-ঝামেলা নেয়ার কি দরকার-এ ধরনের কিছু ভেবে থাকলে তিনি রাজনৈতিক ও আদর্শিক দু’দিক দিয়েই ভুল সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন বলে ভাবতে হবে। কেননা মুষ্টিমেয় সেই জনগণেরই কেউ যদি তিনি হতেন তাহলে অবস্থা কি দাঁড়াত। তার কাছে হয়ত এ ঘটনা বিচ্ছিন্ন ও রোহিঙ্গাদের সন্ত্রাসী কার্যক্রমের ফল বলে মনে হতে পারে, কারণ তারা সেখানে সংখ্যালঘু মুসলিম। তাও যদি হয়ে থাকে তবে মনে রাখা উচিত যে- ওয়ান ম্যানস টেরোরিজম ইজ আদার ম্যানস লিবার্টি। মুক্ত রাজনৈতিক জিবনের সূচনা লগ্নে সুচির শুভবুদ্ধির উদয় হবে এমনটাই আশা করে বিশ্ববিবেক।

বৃহস্পতিবার, ৩১ মে, ২০১২

জীবন থেমে থাকেনা

জীবন যেখানে যেমন
স্বপ্ন ভাঙ্গে,
কিন্তু মন ভাঙ্গে না।
মানুষ হারায়,
কিন্তু ভালবাসা হারায় না।
উত্থান পতন ঘটে,
কিন্তু জীবন থেমে যায় না।

যখন তুমি ছিলেন না, তখনও আমি ছিলাম,
তুমি এসে চলে গেছ,এখনও আমি আছি।
তোমার আসাতে আমার জীবনের শুরু ছিল না,
তোমার চলে যাওয়াতে আমার জীবনের শেষও হবে না।

জীবন যেখানে রেখেছে যেমন,
আমিও সেখানেই আছি তেমন।
জীবন যেখানে রাখবে যেমন,
আমিও থাকব সেখানে তেমন।

জীবন তার নিজস্ব গতিতে চলে,
বেঁচে আছি,বেঁচে থাকতে হয় বলে।

বুধবার, ৩০ মে, ২০১২

ক্ষমা কর

ক্ষমা কর যদি দেখা পাই
তোমার সাথে কোন নদীর মোহনা,
ক্ষমা কর যদি দেখা পাই
পিছঢালা কোন রাস্তার মাথা,
ক্ষমা কর যদি দেখা পাই
অঝোর ধারা বৃষ্টির মাঝে একি ছাতার তোলায়,
ক্ষমা কর তারপর ও যদি দেখা পাই
তোমায় ছাডা আমার জীবনটা বডই অসহায় ।
       Post By

Unpredictable Rinku

আমি সম্ভবত মারা যাবো


আমি সম্ভবত  মারা যাবো

আমি সম্ভবত খুব ছোট্ট কিছুর জন্য মারা যাবো
ছোট ঘাসফুলের জন্যে
একটি টলোমলো শিশিরবিন্দুর জন্যে
আমি হয়তো মারা যাবো চৈত্রের বাতাসে
উড়ে যাওয়া একটি পাঁপড়ির জন্যে
একফোঁটা বৃষ্টির জন্যে আমি সম্ভবত খুব ছোট্ট কিছুর জন্যে মারা যাবো
দোয়েলের শিসের জন্যে
শিশুর গালের একটি টোলের জন্যে
আমি হয়তো মারা যাবো কারো চোখের মণিতে
গেঁথে থাকা একবিন্দু অশ্রুর জন্যে
একফোঁটা রৌদ্রের জন্যে আমি সম্ভবতখুব ছোট্ট কিছুর জন্যে মারা যাবো
এক কণা জ্যোৎস্নার জন্যে
এক টুকরো মেঘের জন্যে
আমি হয়তো মারা যাবো টাওয়ারের একুশ তলায়
হারিয়ে যাওয়া একটি প্রজাপতির জন্যে
এক ফোঁটা সবুজের জন্যে আমি সম্ভবত খুব ছোট্ট কিছুর জন্যে মারা যাবো
খুব ছোট একটি স্বপ্নের জন্যে
খুব ছোট দুঃখের জন্যে
আমি হয়তো মারা যাবো কারো ঘুমের ভেতরে
একটি ছোটো দীর্ঘশ্বাসের জন্যে
একফোঁটা সৌন্দর্যের জন্যে।

রবিবার, ২৭ মে, ২০১২

প্রতীক্ষা



তুমি হীনা এ হূদয় আমার
প্রতীক্ষা
আজও স্বপ্নে হারায়,
জমানো স্মৃতির মাঝে
আনমনেই খুঁজি তোমায়।
একা আমি নিঃসঙ্গতার পথে
আকাশে মেঘ ভেসে যায়,
সময়ের চোরাবালিতে অগোচরে
যেন সব কিছুই বিলীন হয়।
স্রোতবিহীন এক নদীর তীরে
যেভাবে নৌকা থেমে রয়,
আমি আছি তোমার প্রতীক্ষায়
তোমার পথের সীমানায়।
একদিন স্বপ্ন সত্যি হবে
কোনো এক মুহূর্তে আমার কাছে রবে,
জোনাকিরা আলো ছড়াবে
তুমি শুধুই আমার হবে ।

বৃহস্পতিবার, ২৪ মে, ২০১২

তোমাকে অভিনন্দন

প্রিয় নিশাত,

সেদিন রাতে খুব তৃপ্তি নিয়ে ঘুমাতে গিয়েছি । শুধু নারী হিসেবে নয়, ত্রিশ পার করা বাংলাদেশী নারী হিসেবে গর্বিত, পরিতৃপ্ত মন নিয়ে ঘুমাতে গিয়েছি । তার আগের রাতে নেপালের নগরকোট থেকে সদ্য কেনা ‘ Everest’ মুভিটা দেখতে দেখতে তোমার কথা ভাবছিলাম । মনে প্রানে প্রার্থনা করছিলাম যেন যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তুমি তোমার লক্ষ্যে পৌছাতে পার । কারন জেনেছিলাম তোমরা খারাপ আবহাওহায়ার কবলে পড়ে চার নাম্বার বেইস ক্যাম্পে অনেকক্ষণ অপেক্ষায় ছিলে সেই শিখর অর্জনের । সেই থেকে কি যে উৎসুক মন নিয়ে তাকিয়েছিলাম কখন সেই সুসংবাদটা পাব।

মেয়ে তুমি পেরেছ। একত্রিশ বছর বয়সে বাংলাদে্শের প্রথম নারী হিসেবে পৃথিবীর সবচেয়ে দুর্গম পর্বতের চুড়ায়, এভারেষ্টের ৮,৮৫০ মিটার উচুতে উঠে প্রমাণ করেছ বাঙালী মেয়েরাও পারে। শুধু না পারা, দুর্বল, না পাওয়াদের দলে আর আমরা নেই।

ছোটবেলায় আর সবার মতন আমিও স্বপ্ন দেখতাম এমন কিছু করে দেখাতে যাতে মাথা উচু করে বলতে পারি আমি নারী, আমি সব পারি। আমি সবটুকু পারিনি কিন্তু আমার মত শত নারীর মাথা উচু করিয়ে তুমি তা পেরেছ।

তেনজিং নোরকে, এডমন্ড হিলারী, মুসা, মুহিত তারাও তো পেরেছে । কিন্তু তারাতো কেউ তুমি নয়। তাদের কারো মধ্যে আমি আমার ছায়া খুজে পাইনা। আজ তুমি আমার হয়ে বাঙালী নারীর অজস্র বছরের হাজারো স্বপ্নের একটির প্রান্ত ছুঁয়ে এসেছ।

আমার উত্তর প্রজন্মের কাছে আমি আর ওদের গল্প করব না, আমি তোমার গল্প করব। ভীষণ প্রতিকুলতায় অজেয় আরাধ্যকে কিভাবে জয় করতে হয়, কিভাবে সর্বোচ্চ পৃথিবী পৃষ্ঠে উঠে ঘোষনা করেছ ‘তুমি মেয়ে’ সেই গল্প শোনাব তাদের। তুমি পেরেছ । ওয়াসফিয়া ও পারবে। তোমাদের হাত ধরে আমাদের আরো শত নারী পারবে অসম্ভবকে সম্ভব করতে। সেই দিনের অপেক্ষায় রইলাম।

নিশাত মজুমদার, তোমাকে অভিবাদন।                                                       post by Taslima

যে দশটি জিনিস আপনি ফেসবুকে কখনই করবেন না

ফেসবুক এখন আমাদের জীবনের একটি অঙ্গ হয়ে দাড়িয়েছে। আধুনিক মানুষ মাত্রই ফেসবুক ব্যবহারকারী। আর তরুনদের কথা তো বলারই প্রয়োজন পড়ে না। কিন্তু ফেসবুক ব্যবহারে কিছু কিছু জিনিস না করাই ভালো। আমরা যেমন কালো প্যান্টের সাথে লাল মোজা পড়ি না, কিংবা রাতের বেলা কালো সানগ্লাস - এগুলো যেমন ঠিক পরিশীলিত নয়, তেমনি ফেসবুকে আপনি কিছু কিছু বিষয় আছে যেগুলো আপনার করা ঠিক হবে না। এমন দশটি কাজ আমরা এখানে তুলে ধরছি যা আপনি কখনই ফেসবুকে করবেন না।

১. বিব্রতকর ছবিতে কখনই কোনও বন্ধুকে ট্যাগ করবেন না

বিব্রতকর অবস্থায় আমরা জীবনে কে না পড়ি? সবাইকেই কম বেশি পড়তে হয়। একটা সময় ছিল, যখন আপনা বিব্রতকর অবস্থায় পড়লেও তেমন কোন মানুষ জানতে পারতো না। একটি উদাহরণ দিলে বিষয়টি পরিষ্কার হতে পারে। কোনও একটা পার্টিতে গিয়েছেন। হয়তো আপনার একজন বন্ধু কখনই ড্রিংক করেন না; কিন্তু সেদিন কিভাবে যেন একটা গ্লাস হাতে তুলে নিলেন। আর যায় কোথায়! আপনি ছবি তুললন। তারপর আপলোড করে দিলেন ফেসবুকে। তারপর বন্ধুটিকে করলেন ট্যাগ। ব্যস। সেটা তখন দেখতে পেলো তার পরিবার, অফিসের বস এবং আরো অনেকেই। কোনও বন্ধুকে এভাবে বিব্রত করবেন না। এমন করতে থাকলে, ধীরে ধীরে আপনি একা হয়ে যাবেন। এবং এক পর্যায়ে আপনাকেও এমন কিছুর মুখোমুখি হতে হবে।

২. মানুষকে মাত্রারিক্ত গেম/কুইজ/গ্রুপ রিকোয়েষ্ট পাঠাবেন না

ফেসবুকে অন্যদেরকে আপনার পছন্দের গেম কিংবা কুইজ অথবা কোনও গ্রুপে যোগ দেয়ার জন্য অনুরোধ পাঠানো খুবই সাধারন একটি বিষয়। তবে, এটা মাত্রারিক্ত করবেন না। কাউকে বারবার এসব অনুরোধ পাঠানো, আর বাস্তবে তার মুখের উপর গিয়ে ঘ্যানর ঘ্যানর করার মধ্যে কোনও পার্থক্য নেই। এটা খুবই বিরক্তিকর একটি কাজ। নিজেকে সেই বিরক্তকর পরিস্থিতে ফেলা কি ঠিক হবে?

৩. আপনার প্রোফাইলের ছবিটি আপনার নতুন জন্মনেয়া শিশুর ছবি দিয়ে রিপ্লেস করবেন না

আমরা প্রায়শই নিজের সদ্য জন্ম নেয়া শিশুর ছবি দিয়ে দেই নিজেদের প্রোফাইল ছবিতে। কিছু কিছু মা-বাবা আছেন যারা হয়তো গোটা পৃথিবীর ৭০০ কোটি মানুষকে জানাতে চান, তারা একটি বাচ্চা জন্ম দিয়ে কতই না বুদ্ধিমানের মতো কাজ করেছেন।

মার্ক জুকারবার্গ এই ফেসবুক তৈরী করার আগে এই ধরনের মা-বাবাদের হাতে দুটো অপশন খোলা ছিল - ক). হাজারো মানুষের ইমেল ইনবক্স তারা ছবি পাঠিয়ে ভরে রাখতো; নয়তো খ). বিভিন্ন মানুষকে টেলিফোন করে বুঝানোর চেষ্টা করতো তাদের নবজাতকটি কেন আইনষ্টাইনের মতোই এই গ্রহের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ।


এখন তাদের জীবনে যোগ হয়েছে তৃতীয় মাধ্যম - ফেসবুক। আপনি আপনার প্রোফাইল পিকচারটিতে আপনার নবজাতকের ছবি বসিয়ে দিয়ে সবাইকে এটাই জানিয়ে দিলেন যে, আপনি একজন বয়স্ক মানুষ। স্কুল জীবন থেকে আপনার অনেকগুলো বছর পেড়িয়ে গেছে। মানুষ ভাবতে শুরু করে, আপনি বুড়িয়ে গেছেন। আর পাশাপাশি, যাদের বাচ্চা নেই আপনি তাদের ইমোশনকে আঘাত করছেন। তাই, এটা করা থেকে বিরত থাকুন।


৪. প্রতিনিয়ত দুঃখের স্ট্যাটাস দিবেন না

কিছু কিছু মানুষ আছে, তাদের কাছে প্রতিটা দিনই যেন একটি খারাপ দিন - অন্তত তাদের স্ট্যাটাস পড়লে তাই মনে হবে। সেসকল স্ট্যাটাসের অনেকগুলোই হয়তো খুব মন খারাপ কিংবা হতাশা থেকে লেখা হয়েছে। কিন্তু আপনি নিশ্চিত থাকুন যে, আপনার এই স্ট্যাটাস কেউ না কেউ আবার ব্রডকাস্ট করছে। এবং সেই হতাশা অন্যদের মাঝেও ছড়িয়ে দিচ্ছে।

আপনি যদি এমন হতাশার মূলটা হোন, তাহলে সেটা করা থেকে বিরত থাকুন। এক্ষেত্রে নীচের সূত্রটি মনে রাখবেন - যদি আপনার প্রিয় কোনও মানুষ মারা যায়, কিংবা আপনার চাকুরীটি চলে যায়, তখন আপনি অবশ্যই বন্ধুদের কাছে সমবেদনা চাইবেন। কিন্তু আপনি আপনার একটি নখ ভেঙ্গ ফেললেন, কিংবা বাস মিস করলেন, কিংবা পায়ে হালকা ব্যাথা পেলেন - এই কষ্টগুলো নিজের ভেতর বহন করতে শিখুন। এই সব কষ্ট সবার সাথে শেয়ার করবেন না।


৫. অফিসের বসকে কিংবা সহকর্মী/বন্ধুদেরকে হেয় করে কোনও মন্তব্য বা স্ট্যাটাস দিবেন না

অফিসের বসকে হেয় করে কথা বলা সব সময়ই খুব ঝুকিপূর্ণ। ফেসবুকে আমরা অনেকেই তাড়াহুড়ো করে ইমোশনাল হয়ে মন্তব্য বা স্ট্যাটাস লিখে ফেলি। কিন্তু সেই মন্তব্য বা স্ট্যাটাসের কারণে আপনাকে সেই অফিস থেকে পাততাড়ি গুটিয়ে বাসায় চলে আসা লাগতে পারে; এবং সেটা অন্যান্য সহকর্মীদের সামনে দিয়েই।

আপনার যখন একটি কাজে ব্যস্ত থাকার কথা, তখন আপনি সেই কাজটিকে সমালোচনা করে মন্তব্য বা স্ট্যাটাস দেয়াটা খুবই খারাপ একটি বিষয়। ধরুন, আপনার একটি রিপোর্ট তৈরী করার কথা যা আপনার মন মতো নয়; এবং আপনি স্ট্যাটাস দিলেন, "ধ্যুৎ, রিপোর্ট লেখা একটা শয়তানের কাজ!" - ব্যাস। আপনার বসের চোখে সেটা পড়বেই। আর তখুনি যদি সেটা চোখে না পড়ে, আপনি নিশ্চিত থাকতে পারেন, দু-তিন দিনের ভেতরই কেউ না কেউ তাকে সেটা জানিয়ে দিবেনই। তখন আপনার ওখানে কাজ করাটাই অসম্ভব হয়ে উঠবে।


৬. আপনার ছেলেমেয়ে, ভাগ্না/ভাগ্নি, ভাতিজা/ভাতিজী ইত্যাদি কাউকে ফ্রেন্ড অনুরোধ পাঠাবেন না

খুবই অবাক হচ্ছেন, তাই না? একটু ভেবে দেখুন - ফেসবুক কিভাবে শুরু হয়েছিল? ফেসবুক শুরু হয়েছিল হার্ভার্ডের ছাত্রছাত্রীদের নিজেদের ভেতর ছবি শেয়ার করার জন্য। তারপর সেটা ছড়িয়ে গেলো আমেরিকার অন্যান্য কলেজে, তারপর পৃথিবীর অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে, স্কুলে এবং যাদের বয়স ১৩-এর উপরে তাদের সবার ভেতর। তার অনেক পরে এসে আপনার মামা, চাচা কিংবা মা এটা বুঝতে পেরেছে এবং যুক্ত হয়েছে।

যখন কিশোরদের কোনও বিষয় মা/বাবারা পছন্দ করতে শুরু করেন, সাধারনত ধরে নিতে হয় যে, ওই ট্রেন্ডটার ওখানেই মৃত্যু হলো। তবে ফেসবুক এখনো সেই অবস্থায় পৌছুয়নি। এখনও এটি বুড়ো এবং যুবা - সবাই পছন্দ করছে। এবং কিছু কিছু অতি সচেতন মা/বাবা তাদের সন্তানরা ফেসবুকে কী করছে সেটা দেখার জন্য তাদেরকে বন্ধু হিসেবে যোগ করেন। আর বিপদটা সেখানেই। আপনি নিজে কি চাইবেন আপনার বন্ধুদের সাথে যাবতীয় আলাপ আপনার মা/বাবা শুনে ফেলুক? কিংবা আপনি বন্ধুদের নিয়ে কোথাও একটু বৈচিত্র করতে গিয়েছেন, সেই ছবি আপনার মা/বাবা দেখুক? যদি সেটা না চান, তাহলে ধরে নিন, আপনার ছেলেমেয়েরা কিংবা ভাগ্নে/ভাগ্নিরাও সেটা চায় না।


৭. পুরনো প্রেমিক/প্রেমিকার পিছু নেবেন না

সম্পর্ক গড়ে, সম্পর্ক ভাঙ্গে - এটাই মানুষের ধর্ম। কোনও সম্পর্কই সারাটা জীবন এক রকম থাকে না - সেটা কখনও আপনার দিক থেকে, কখনও অপর দিক থেকে। যে কোনও কারণেই হোক, আপনার হয়তো সম্পর্কটি আর টিকলো না - অনেক কষ্টে আপনি নিজেকে এমন একটা জায়গায় আনলেন যেন, আপনি আবার নতুন করে ভালোবাসার জন্য প্রস্তুত।

আপনি নতুন সম্পর্কে জড়ালেন। তার সাথে নতুন স্মৃতি তৈরী হচ্ছে। পুরনো সব কিছু ফেসবুকের পাতা থেকে মুছে ফেলেছেন। এমনকি, পুরনো প্রেমিক/প্রেমিকাকে "আনফ্রেন্ড"-ও করে ফেলেছেন। নতুন সম্পর্ক নিয়ে আপনি ডুবে আছেন।


কিন্তু হঠাৎ কী মনে হলো, আপনি দেখতে চাইলেন আপনার পুরনো মানুষটি কেমন আছে! আর তখুনি ঘটবে যত বিপত্তি। কখনও সিনেমা দেখতে গিয়ে, কিংবা শপিং মলে গিয়ে পুরনো মানুষের সাথে হুট করে দেখা হয়ে গেলে আপনি যেমন কিছুটা সময়ের জন্যও পুরনো সময়ে হারিয়ে যাবেন, ফেসবুকেও তাই। এবং সেটা আরো বেশি মাত্রায়, কারণ ফেসবুকে খুব সহজেই আপনি আপনার পুরনো মানুষকে খুঁজে পাবেন, সে কোথায় গেলো, কার সাথে মিশছে, কোথায় ডিনার করতে যাচ্ছে, কার সাথে লং ড্রাইভে যাচ্ছে - ইত্যাদি সব কিছুই আপনাকে তাড়া করে বেড়াবে। ভুলেও ফেসবুকে পুরনো সম্পর্কের পিছু নেবেন না। আপনার জীবন পুড়ে ছাড়খার হবে।


৮. বুঝতে অসুবিধা হয় এমন স্ট্যাটাস লিখবেন না

আমরা প্রায়শই দেখি, মানুস স্ট্যাটাস লিখেছ হরেক রকমের সিম্বল দিয়ে, হাসির চিহ্ন, এক্স, এক্স ইত্যাদি - যা বুঝতে সেটা পড়তে হয় কয়েক বার। এমন দুর্বোধ্য স্ট্যাটাস দিয়ে নিজেকে সবার সামনে ছোট না করে, পরিস্কার ভাষায় স্ট্যাটাস দিন।

৯. হুট করেই রিলেশনশীপ স্ট্যাটাস "সিঙ্গেল" করার মাধ্যমে কাউকে ডাম্প করবেন না

সম্পর্ক ভাঙ্গতেই পারে। তবে একটি সাধারন সম্পর্ক ভেঙ্গে দুটো মানুষের ভেতর যে পরিমান কথা এবং ইমোশন যুক্ত থাকে, হুট করে ফেসবুকে "সিঙ্গেল" লিখে দিলেই সেটা শেষ হয়ে যায় না। এটা খুবই ছোটমানুষী। নিজেকে সবার সামনে ছোটমানুষ হিসেব তুলে ধরার প্রয়োজন নেই।

সম্পর্ক ভাঙ্গার ঘোষনা দেয়ার জায়গা ফেসবুক যেন না হয়। একটি সম্পর্ক ভেঙ্গে গেলে কিছুটা সময় নিয়ে, ধীরে সুস্থ্যে আপনার স্ট্যাটাস আপডেট করুন। কিন্তু ফেসবুকে এসে সম্পর্ক ভাংবেন না।


১০. একদম অপরিচিত কাউকে বন্ধু বানাবেন না

আপনি নিশ্চই একটি খাবারের দোকানে গিয়ে কাউকে দেখে তাকে জিজ্ঞেস করবেন না, আমি কি তোমার বন্ধু হতে পারি? আপনার কাউকে ভালো লাগলে হয়তো, তার সাথে সৌজন্য কা বলবেন, তাকে চেনার চেষ্টা করবেন, তারপর হয়তো কখনও সেটা বন্ধুত্বে রূপ নিতে পারে। কিন্তু এই কাজটি আমরা হরহামেশাই ফেসবুকে করে থাকি। একদম অজনা মানুষকে আমরা বন্ধু হিসেবে যোগ করে ফেলি।

ফেসবুকে এমন লক্ষ লক্ষ মানুষ আছেন যারা অপরিচিত মানুষকে বন্ধু রিকোয়েস্ট পাঠিয়ে থাকেন। এবং তারা মনে করেন, এটা ঠিক একটি কাজ। তাদের ধারনা ভুল। এটা মোটেও ঠিক কোন কাজ নয়। কোনও অপরিচিত কারো সাথে যদি বন্ধুত্ব করতে হয়, তাহলে তাকে রিকোয়েষ্ট পাঠানোর সাথে কারনটিও ব্যাখ্যা করুন।


আশা করছি আপনারা এগুলো মেনে চলবেন; এবং নিজেকে সুন্দরভাবে কোটি কোটি মানুষের সামনে তুলে ধরবেন।
শুভ কামনা সবার জন্য।

অনেকগুলো ভুল

প্রায়’ই স্বরণ করি নিজের ভুল গুলোকে, জিঙ্গাসা করি
- তোমরা ভালো আছো তো? বলে তারা
- আমরা ভালো, তবে তুমি?
- নাহ! আমি ভালো নেই।
- সত্যি কী; তাই? না বোঝাও হতে পারে, আবার জিজ্ঞাসা করি
- তোমরা আমাকে স্বরণ কর না? তারা চুপ থাকে, আবার মাঝে-মাঝে বলতে গিয়েও.. ... ... প্রয়োজন নেই ভালো থেকো তোমরা।
ছোট্ট জীবনের এই পরিসরে অনেক গুলো ভুল করেছি। যদিও সবাই বলে ভুল থেকে’ই প্রকৃত শিক্ষা গ্রহন করে মানুষ। ভবিষৎ কাজটি ভেবে করার তাগিদ আসে কৃত ভুল থেকে’ই। কিন্তু আমি যে তা পারিনি। বাবা তোমার দুঃখ আমি বুঝি। খুব কাছ থেকে তোমাকে বোঝার, দেখার, জানার সুযোগ যদিও আমার হয়নি!!! তথাপি তোমার আকাক্ষা আমি বুঝেছি।
আমায় ক্ষমা করো বাবা। আমায় ক্ষমা করো। তোমার মতো উত্তম বন্ধুকে আমি খুব ভালোবাসি।
মনের ব্যাথা গুলো কাউকে বোঝাতে পারছিনা। আসলে তোমরা আমার কাছের মানুষরা’ই আমাকে বোঝ না!
 সব সময় তোমার কষ্ট টির কথা মোবাইলে শুনি ।কিন্তু কিছুই করার থা্কেনা । sorry abbu

চাই না

আমি দরজা খুলে দেখতে চাই না-
দরজার ওপাশে কেউ দাড়িয়ে আছে।
আমার জানার কোন ইচ্ছা নেই-
ভারি গলায় কে আমাকে ডাকছে?
আমি জেগে ওঠার চেষ্টা করছি।
জাগতে পারছিনা । 
কেউ আমাকে স্বপ্নের শেষটা দেখাতে চায়,
কিন্তু আমি দেখতে চাই না।

মঙ্গলবার, ২২ মে, ২০১২

হারিয়ে যাব ?

ইচ্ছে হয়েছিল ঘুঁড়ির মত মুক্ত
আকাশে উড়ে বেড়ানোর,
যেমন ভাবা তেমন কাজ, উড়তে থাকলাম।
স্বাধীন ভাবে, কারো দিকে তাকানোর সময়
নেই।
উড়ছিলাম তো উড়ছিলাম, ভাবলাম অনেক হয়েছে, এবার
ফিরে যাওয়া যাক।
এবার সুঁতোই টান পড়া উচিত। নিচে তাকালাম, তাকিয়ে খুব হতাশ
হয়ে গেলাম।
ওখানে যে নাঁটাই হাতে কেউ ই নেই,,
আমার সুঁতোই টান দেবার মতো,,
ফিরে আসার সম্ভাবনা তো নাই,, তবে কি উড়তে উড়তে এক সময় আমি হারিয়ে যাব
নাঁটাই থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে অজানা কোন
গন্তব্যে ?

চলে গেলে






                                                   অনেকদিন পর তোকে
                                                      কিছু লিখবো বলে
                                                  নিয়েছি এই কলম হাতে,
                                                সাদা পৃষ্ঠায় কলম চালালাম
                                                        কালি নেই তাতে।
                                                   মোবাইলটা টেবিলে ছিল
                                                       হাতে নিলাম সেটাও,
                                                      নাম্বারটা খুঁজতে গিয়ে
                                                          পেলাম না তাও।

                                                       এভাবে শুরু হল দূরত্ব
                                      আর কোন এক সময় চলে গেলে অনেক দুরে ।